দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

প্রতিবেশী হারাল প্রতিবেশীকে, চাকরিদাতা হারলেন কর্মীর কাছে

ফাহিম রেজা শোভন

জানুয়ারি ৯, ২০২৪, ১২:৫৩ এএম

প্রতিবেশী হারাল প্রতিবেশীকে, চাকরিদাতা হারলেন কর্মীর কাছে

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

টেকসই হল না অনেক সাংসদের সংসদ সদস্য পদ। তদের মধ্যে সরকার দলীয় জোটের রয়েছেন কয়েকজন প্রবীণ নেতা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রথমে প্রায় সব আসনেই নিজেদের প্রার্থী দিলেও, পরে এই শরীকদের জন্যেই ছেড়ে দেয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত ৪ টি আসনে বন্ধুদের প্রতীক ব্যবহার করেও জিততে পারেননি তারা।

১৪-দলের শরীকরা ভাগাভাগিতে নৌকা মার্কা পেয়েছিলেন ৬টি আসনে। অতঃপর দুই-তৃতীয়াংশ আসনেই হেরে বসে আছেন তারা। 

এছাড়াও নিজস্ব প্রতীকে আরও কিছু আসনে অংশ নেন শরীকগণ। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ও জাতীয় পার্টি- জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যান্য শরীকরা শুরু থেকেই চাইছিলেন ক্ষমতাসীনরা যেন তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরিয়ে দেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ, শরিকদের সেই দাবি আমলে নেয়নি। এতেই ঘটে বিপত্তি। ভোট ভাগাভাগি হয়ে হেরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেয় বেশিরভাগ বাম ঘরানার এই রাজনীতিবীদদের।

প্রচারণার শেষ সময়ে আঞ্চলিক নেতা কর্মীরা শরীকদের জন্য ‘ত্রাতা’ হয়ে এগিয়ে এলেও, শেষ রক্ষা হয়নি।

আর বাকী যারা নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেছেন, (ইসির তথ্য অনুযায়ী) জাসদের ৬৬, ওয়ার্কার্স পার্টির ২৬ ও জেপির ১৩ প্রার্থী, তাদের কেউই নির্বাচিত হতে পারেননি।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের ৩ শরিক দল মিলে আসন পেয়েছিল ১০টি, জয়ী হয়েছিল ৬টি আসনে। অর্থাৎ ৫ বছর আগে দৃশ্যপট ছিল ঠিক উলটো। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসনে তখন জয়লাভ করে দলগুলো।

কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে সর্বশেষ তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য হন জাসদের সভাপতি।

তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন। একই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন আরেফিন। হাড্ডা হাড্ডি লড়াই শেষে ২৩,৩৫৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান সাবেক তথ্য মন্ত্রী ইনু।

ওয়ার্কার্স পার্টি সেক্রেটারি ফজলে হোসেন বাদশা, নিজ এলাকায় পরিচিত মেহনতি মানুষের নেতা হিসেবে। ২০০৮ থেকে এখন অব্দি জিতে পরপর তিনবারের আইন প্রণেতা তিনি। তবে রাজশাহী-২ সদর আসনে এই প্রার্থীর কপাল পুড়িয়েছেন নিজেরই এক সময়ের প্রতিবেশী শফিকুর রহমান বাদশা। রাজশাহীর হড়গ্রাম বাজার এলাকায় বসবাস করতেন দুই জনই। ডাক নামেও মিল রয়েছে তাদের। বিজয়ী বাদশা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এক বাদশা আরেক বাদশা’র কাছে হেরেছে প্রায় দ্বিগুন ভোটের ব্যবধানে।

এদিকে জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর-২ আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। তার একসময়ের সহকারী একান্ত সচিব মো. মহিউদ্দীন মহারাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েই চমকে দেন এলাকাবাসীকে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। মঞ্জু তার কাছে সাড়ে আঠাশ হাজার ভোটে পিছিয়ে থেকে পরাজিত হন ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। 

এদিকে একদলের সহ-সভাপতি আরেক দলের সহ-সভাপতিকে হারিয়েছেন লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে। জাসদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোশারফ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র কাছে হেরে গেছেন প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে।

বিজয়ী দুই প্রার্থীর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বরিশাল-২ আসনে, আর জাসদ নেতা এ কে এম রেজাউল করিম (তানসেন) বগুড়া-৪ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়যুক্ত হয়েছেন। মেনন জিতেছেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৯০,০০০ এরও বেশি ভোট পেয়েছেন আর তানসেন জিতেছেন ২০০০ ভোটের ব্যবধানে। 

Link copied!