সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থার আড়ালে ‘পরাজিতদের পুনর্বাসনের’ শঙ্কা তারেকের

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২, ২০২৫, ১২:০৮ পিএম

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থার আড়ালে ‘পরাজিতদের পুনর্বাসনের’ শঙ্কা তারেকের

ছবি: সংগৃহীত

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থার আড়ালে দেশের রাজনীতিতে সবার অগোচরে আবার পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম করে দেওয়া হচ্ছে কিনা তা ভেবে দেখতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান।

এমন প্রেক্ষাপটে দলগুলোর মধ্যে ‘প্রতিটি বিষয়ে ঐক্য না হলেও জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য জরুরি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

মঙ্গলবার, ০১ জুলাই রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তির বিশেষ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি। এর আগে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঐকমত্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এদিন বিকাল ৩টায় বিএনপির উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও নিহতদের স্মরণে এ বিশেষ অনুষ্ঠান হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত ‘জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাসহ বিএনপির বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে মিলনায়তনটি কানায় কানায় পূর্ণ ছিল।

অতিথির প্রথম সারিতে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের নিহত পরিবারের সদস্যরা বসেন। তাদের হাতে বিএনপির পক্ষ থেকে ক্রেস্ট তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থার দাবির কথা তুলে ধরে আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক বলেন, “সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থা দেশে ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তিমূলক সমাজ এবং অস্থিতিশীল সরকার সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠতে পারে কিনা- এই বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে আরো একবার ভেবে দেখার জন্য আমি সকল রাজনৈতিক নেতাদের বিনীত আহ্বান এবং অনুরোধ করব।

“সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থার আড়ালে পুনরায় দেশের রাজনীতিতে নিজেদের অজান্তেই পতিত পরাজিত অপশক্তি পুনর্বাসনের পথ সুগম কারণ করে দেওয়া হচ্ছে কিনা এ বিষয়টিও আমাদের প্রত্যেকের অত্যন্ত সিরিয়াসলি ভাবা দরকার।”

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে এইসব বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রয়েছে ভবিষ্যতেও তা অটুট থাকবে ইনশাআল্লাহ।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘‘আমি মনে করি নিত্য নতুন ইস্যু যদি আমরা সামনে নিয়ে আসতে থাকি এর সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা আবারো মাথা চাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে।”

আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় সরকার গঠন করবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেশ এবং জনগণের উন্নয়নের প্রতিটি কর্মসূচির বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ এবং প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে। একটি দুর্নীতিমুক্ত নিরাপদ মানবিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুমহান লক্ষ্যে দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রতিটি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ।”

তারেক বলেন, একই সঙ্গে রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি বিতাড়িত ‘ফ্যাসিবাদীদের’ বিচার কার্যক্রমও শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানেও সক্রিয় রয়েছে।

বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি ‘ইচ্ছামতন শর্তের তালিকা না বাড়িয়ে’ আন্দোলনে আত্মত্যাগ করা ব্যক্তিদের আকাঙ্ক্ষার আলোয় বাংলাদেশকে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন ও অধ্যাপক নাহরিন খানের যৌথ পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহ উদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক আবদুল হালিম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, নেজামী ইসলাম পার্টির একেএম আশরাফুল হক, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, এনসিপির আজিজুর ইসলাম আদিব, হেফাজতে ইসলামের জোনায়েদ আল হাবিব, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মঞ্জরুল হক আফেন্দি, বাংলাদেশ জাসদের নাজমুল হক প্রধান, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আলী কাশেমী, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান এবং বর্ষপূর্তি পালন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহসিনা রশদীর লুনা, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নির্যাতনের শিকার চিকিৎসক সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময়ে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী, মীর মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, ওয়াসীমের বাবা শফিউল আলম, ইয়ামিনের বাবা মহিউদ্দিন, ফারহান ফাইয়াজের ছোট বোন ফারিন, আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, পুরানা ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাশের বাবা আনন্দ দাস, আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমাতুজ জোহরা, নুরুজ্জামান জনির ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরা, পারভেজ হোসেনের মেয়ে আবিদা ইসলাম হৃদি, কাজী ফাহমীম জাফরের মা কাজী লুলুল মাকমিম, গুম থেকে বেঁচে যাওয়া বিএনপি গণশিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকার খোকন এবং ‘মায়ের ডাক’ এর আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম তুলি, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু নাভিল, পুলিশের গুলিতে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া রেদোয়ান হোসেন রিয়াদ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!