ঘাড়কাটা চাইনিজ ইলিশই এখন ক্রেতাদের শেষ ভরসা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম

ঘাড়কাটা চাইনিজ ইলিশই এখন ক্রেতাদের শেষ ভরসা

কম দামে এই ধরনের ঘাড় কাটা ইলিশের ক্রেতা বেশি। ছবি : দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ।

যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে অন্যান্য বাজারের তুলনায় মাছের দাম কম। সেই সুবাদেই সকালে এসেছিলেন সুমন হাওলাদার। তবে ১ ঘন্টা ঘুরেও ইলিশের দামে বনিবনা না হওয়ায় অবশেষে ঘাড় কাটা ইলিশ কিনছেন। আড়ৎদারদের কাছে যেটা চাইনিজ ইলিশ নামেই পরিচিত।

তুলনামূলক কমদামে কিনলেও স্বাদ ও সতেজতা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে সুমনের মনে। তবে বিক্রেতার দাবি, অন্য সব ইলিশের মতই এই ইলিশ। শুধু মাত্র ঘাড়ের অংশ কাটা থাকায় কম দামে বিক্রি করতে পারছে তারা।

সাধারণত যাত্রাবাড়ীতে পাইকারী বাজারে সকাল ৯ টার মধ্যেই কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়। তবে ইলিশের চাহিদা ও যোগান থাকায় এখন দুপুর পর্যন্তই বসে এই পাইকারী বাজার। রাস্তা ঘেষেই পাইকারী বাজারের একটি অংশই সম্পূর্ণ ইলিশ বিক্রি করা হয়ে থাকে। পাশেই পাওয়া যাচ্ছে ভারত থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন ধরনের মাছ।

সরেজমিনে দেখা যাচ্ছে ৫০০ গ্রামের ইলিশ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে গড়ে ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। আর ২৫০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

এদিকে ১ কেজি ২০০ থেকে ৩০০ গ্রামের ইলিশ কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল দেড় হাজার টাকার মধ্যে। তবে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বড় ইলিশের দাম। ১ কেজি ৮০০ গ্রাম ইলিশ গত সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছিল ১৮০০ টাকা দরে। তা চলতি সপ্তাহে ২ হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

চাইনিজ ইলিশ কি?

তবে ইলিশ মাছের এই উর্ধ্বমুখী দামের ফলে ক্রেতাদের চোখ এক বিশেষ ধরনের ইলিশের দিকে। আড়তদার ও বিক্রেতারা যেটাকে চাইনিজ ইলিশ বলে থাকে। যদিও এগুলো বাংলাদেশের বরিশাল ও চাঁদপুর অঞ্চলের তবে এই অদ্ভুত নামকরন করা হয়েছে। আর এই ইলিশের মাথার ওপরের অংশ ঘাড়ের দিকে একটি লম্বা কাটা। যেন মাথাটা যেকোন সময়ে খসে পড়বে।

মূলত ২০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজনের এই ইলিশগুলো ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম কম হলেও ক্রেতাদের ভরসা যেন কম এই ইলিশের। তবে বিক্রেতা আজমত আলী বলেন, এগুলো মূলত ডিমওয়ালা ইলিশ ছিল। অন্য দেশে ইলিশ রপ্তানি নিষেধ থাকলেও কোরিয়া,চীন, জাপানে ইলিশের ডিমের চাহিদা। তাই এমনি ঘাড় কেটে ডিম বের করে সেগুলো রপ্তানি করা হয়। আর সেই ইলিশ এখানে পাওয়া যায়। স্বাদ ও মান একই থাকে। আর হোটেল মালিকদের এই  ইলিশ সাপ্লাই দিয়ে থাকি। তাই এই ইলিশের কেনাবেচা ভালই।

তবে ক্রেতাদের অনেকেই এই ধরনের ইলিশ কিনতে দ্বিধায় রয়েছে। তবে দাম কম দেখে বেছে বেছে কিনছেন কেউ।

যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করেন আশ্রাফ আলী। মাদ্রাসায় ইলিশের আয়োজন করা হবে। এজন্য কমদামে এই ইলিশ কিনছেন।

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, এর আগে আমি এই চাইনিজ ইলিশ কিনেছি। স্বাদ স্বাভাবিক বিধায় এবার সবার জন্য কিনতে আসছি। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে ১০০ টাকা দাম কেজিতে বেড়ে গেছে। আর ফ্রেশ ইলিশতো হাতের নাগালেই নাই বলতে গেলে।

ভারতে গেছে ৫৪ টন ইলিশ

দূর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার মে.টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হলেও এত রপ্তানি করা হবে না বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। কলকাতাভিত্তিক ফিশ ইম্পোর্টার এসোসিয়েশনের (এফআইএ) মতে, দাম ও প্রাপ্যতা কম থাকায় মাত্র ২৫০ টন ইলিশ আমদানি করা হতে পারে।

এফআইএর সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ বলেন,এমনিতে কলকাতার মানুষ পিস কেটে ইলিশ কেনে। ফলে দাম বেশি থাকায় অনেকেই টাইট বাজেটে ইলিশ ক্রয় করবে। তাই আমদানি বেশি হবে না।
সকালে কলকাতার গড়িয়াহাট বাজারে দেখা যায় প্রচুর বিক্রেতা বাংলাদেশের ইলিশ বিক্রি করেছেন। এছাড়াও কলকাতার বিভিন্ন বাজারে বিক্রেতারা বাংলাদেশের ইলিশ নিয়ে আসেন মানিকতলা, লেক মার্কেটের মতো বড় বাজারেগুলোতে। আজকে বেচাকেনার মাধ্যমে ভারতীয়দের বাংলাদেশের ইলিশা প্রতীক্ষা শেষ হয়। 

পাইকারি বাজারে এক কেজির থেকে বড় ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০-১৭০০ রুপিতে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৷ যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২২০০-২৪০০ টাকা। এক কেজির নিচের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার চারশ টাকা থেকে এক হাজার পাঁচশ রুপিতে। যা বাংলাদেশি টাকায় ১৯০০-২১০০ টাকা। 

এই ইলিশ কলকাতার খুচরা বাজারে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার রুপি কেজি৷ যা বাংলাদেশি টাকায় ২৮০০-৩৫০০ টাকায়। ফলে কলকাতার বাজারে বাংলাদেশের ইলিশ গেলেও অনেকের ধরাছোঁয়ার বাইরে৷

Link copied!