শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির ঢল

জাতীয় ডেস্ক

জুন ৭, ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম

শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির ঢল

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ঈদুল আজহার নামাজ। এ বছর শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার ১৯৮তম জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে মাঠ কিছুটা কর্দমাক্ত হলেও ঈদের আগের দিন সূর্যের দেখা মেলায় স্বস্তি ফিরে পান আগত মুসল্লিরা।

শনিবার (৭ জুন) সকাল ৯টায় জামাত শুরু হয়। এতে ইমামতি করেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর ইমামতির দায়িত্ব থেকে বাদ পড়ার পর এ বছর পুনরায় তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা তিনি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেন।

নামাজ শেষে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং বিশ্ব শান্তির জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ও তার আশপাশের এলাকাজুড়ে নেওয়া হয় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদগাহে প্রবেশের আগে মুসল্লিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তল্লাশি পার হতে হয়।

ভোর থেকেই মুসল্লিরা ঈদগাহমুখী হতে থাকেনকেউ পায়ে হেঁটে, কেউ রিকশায়, কেউবা সাইকেল কিংবা গাড়িতে। আগতদের যাতায়াতে সহায়তা করতে প্রতিবারের মতো এবারও ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে দুটি বিশেষ ট্রেন চালু করে রেল কর্তৃপক্ষ।

ঈদগাহ মাঠের আশেপাশে মোতায়েন ছিল মেডিকেল টিম ও ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট, আর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন বিপুল সংখ্যক স্কাউট সদস্য।

নারীদের জন্য আলাদা ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সরযূবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে, যেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী অংশগ্রহণ করেন।

নামাজ শুরুর আগে ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মুসল্লিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

ঈদুল আজহার কোরবানির আনুষ্ঠানিকতার কারণে ঈদুল ফিতরের তুলনায় কিছুটা কম উপস্থিতি দেখা গেলেও এবারও শোলাকিয়ায় এক লাখেরও বেশি মুসল্লি একত্রিত হয়ে নামাজ আদায় করেছেন।

নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠ ও শহরের প্রতিটি প্রবেশপথে বসানো হয় সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচটাওয়ার, পাঁচটি আর্চওয়ে ও ধাতব শনাক্তকারী যন্ত্র। মাঠে প্রবেশের আগে গোটা এলাকা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হয়। শহর ও আশপাশের অলিগলিতে স্থাপন করা হয় অতিরিক্ত চেকপোস্ট।

শহরের প্রধান মোড়ে মোড়ে নির্মিত হয় বর্ণিল শুভেচ্ছা তোড়ন, রাস্তার দুই পাশে টাঙানো হয় রঙিন পতাকা ও ব্যানার। পুরো কিশোরগঞ্জ শহরজুড়ে ছিল ঈদের ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতা ও উৎসবমুখর পরিবেশ।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, ১৮২৮ সালে এ মাঠে সোয়া লাখ মানুষ একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছিলেন, যার ফলে এর নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’—যা সময়ের সাথে রূপ নেয় ‘শোলাকিয়াতে। এ বছরও সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে শোলাকিয়ায় জমায়েত হয় লাখো মুসল্লি।

Link copied!