চক্ষু হাসপাতালের সেবা বন্ধ, কবে চালু হবে স্পষ্ট নয়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১, ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম

চক্ষু হাসপাতালের সেবা বন্ধ, কবে চালু হবে স্পষ্ট নয়

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গত বুধবার থেকে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহসাই চালু হচ্ছে না হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। এদিকে গতকাল শনিবার সেবা নিতে আসা রোগীদের আশপাশের হাসপাতালের চক্ষু বিভাগ থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

রোববার, ০১ জুন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, ‘গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, চক্ষুবিজ্ঞান ইনিস্টিউটের সেবা বন্ধ থাকবে। রোগীদের অন্য জায়গায় সেবা নিতে বলা হয়েছে। তবে হাসপাতাল কবে চালু হবে তা স্পষ্ট করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতের মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনায় গত বুধবার সকাল থেকেই বন্ধ রয়েছে চক্ষু হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা।

আজ রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ও নার্স নেই। সকাল থেকেই হাসপাতালের সামনে চিকিৎসা নিতে আসা অনেককে জড়ো হতে দেখা যায়। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নতুন রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। এছাড়াও আগে যেসব রোগী হাসপাতাল থেকে আগে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের অনেকে ফলোআপের জন্য এসেছেন। আবার অনেকে আসছেন অপারেশনের জন্য। হাসপাতাল বন্ধ থাকায় সেবা না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীরা। খবর সমকাল।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে ৫০ জন জুলাই যোদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি। আত্মহত্যার চেষ্টা করা চারজন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন সিএমএইচে ভর্তি আছেন। এ ছাড়া প্রায় ১৫০ জন সাধারণ রোগী ছিলেন, যারা নিরাপত্তার অভাবে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।

জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আকবর কামাল বলেন, ‘উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। হাসপাতাল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, সেটিও আমরা বোঝাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, জুলাইযোদ্ধারা হাসপাতালের ৮ থেকে ১০ কর্মচারীর একটি তালিকা দিয়েছে। তারা বলছে, ওই কয়েকজন বাদে বাকিরা হাসপাতালে এসে সেবা দিতে কোনো বাধা নেই। আমরাও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি, হাসপাতালটি বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে।

হাসপাতাল কবে চালু হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আমরা আলাদাভাবে কিছু বলতে চাচ্ছি না। এ মুহূর্তে করণীয় প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি আকারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকার জন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চরম নিরাপত্তাহীনতাকে দায়ী করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আহতদের প্রতি সম্মান রেখে সীমিত পর্যায়ে সেবাদান অব্যাহত থাকলেও সার্বিক চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২৯ মে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালের অভ্যন্তরে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ফলে ওই দিন থেকেই হাসপাতালের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে শুধু জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা অবস্থান করছেন। সারাদেশ থেকে আসা অন্য চক্ষু রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় দুঃখ প্রকাশ করছে।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম গতকাল বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকরা কাজে ফিরতে রাজি নন। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। চিকিৎসাসেবা দ্রুত চালুর ব্যাপারে চেষ্টা করছি। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক।’  

আজিমপুর থেকে চোখের সমস্যা নিয়ে আসেন আজিজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে কয়েক দিন ধরে সেবা বন্ধ, সরকার থেকে কেনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সাধারণ জনগণ চিকিৎসাসেবা নিবে কোথা থেকে। অর্থসংকটে বেসরকারি হাসপাতালেও সেবা নিতে পারবো না। এখন আমরা কী করবো।’

মোহাম্মদপুর থেকে সেবা নিতে আসা এক প্রৌঢ় বলেন, ‘আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হাসপাতালের সামনে আসি। এখন ১১টা বাজে কিন্তু হাসপাতালের গেট খুলেনি। এখানে এসে শুনি, হাসপাতাল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ। আমরা এখন কি করবো, কোথায় যাব।’

অচলাবস্থা কাটাতে গত শুক্রবার হাসপাতালের কয়েকজন সচিব, হাসপাতাল প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বৈঠক হলেও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা। হাসপাতালটির চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধা রোহান আহমেদ বলেন, আমি হাসপাতালেই আছি। সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। আমাদের খাবার ও ওষুধ বাইরে থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। দুপুরে চিকিৎসা চালুর বিষয়ে বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। 

গত বুধবারও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাসহ এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবু বকর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আহত ৮-১০ জন জুলাই যোদ্ধাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করার বিষয়ে তারা সম্মত হয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, পুরো সেবা কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করছেন। তাদের ভাষ্য, হাসপাতালের ভেতর জুলাই যোদ্ধাদের কিছু অংশ সহিংস আচরণ করেছে। ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটেছে বারবার। এতে আতঙ্কে রয়েছেন চিকিৎসক ও স্টাফরা।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসক ও কর্মীরা কাজে ফিরতে অনিচ্ছুক।’

যে ঘটনার জেরে অচলাবস্থা

হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চার রোগী সঠিক চিকিৎসা না পাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ২৫ মে বিষপান করলে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে। এরপর ২৭ মে পরিচালকের কক্ষে গিয়ে আরেক আহত শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়; তৈরি হয় অবিশ্বাসের আবহ। এরপর গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থায় যায়। হাসপাতালে ভর্তি জুলাই যোদ্ধা, কর্মচারী এবং রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়।

হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় এসব রোগীকে এখন অন্যান্য হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে।

Link copied!