হাট থেকে গরু উধাও : চড়া দাম হাঁকাচ্ছে ব্যবসায়ীরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ৬, ২০২৫, ০৫:৪১ পিএম

হাট থেকে গরু উধাও : চড়া দাম হাঁকাচ্ছে ব্যবসায়ীরা

রাজধানীর কোরবানির হাটে হঠাৎ গরুর সংকট।

‘একটা বেঁচছি ১ লাখ ২০ আরেকটা ১ লাখ ৪০। এহন দাম বাড়তি; এডা ১ লাখ ৮০ এর নীচে ছাড়ুম না। ’ ঠিক এভাবেই বলছিলেন শনিরআখড়া হাটে গরুর বেপারী শামীম মিয়া। মাগুরা থেকে তিনটি একই আকারের গরু এনেছিলেন তিনি। এক সপ্তাহ ধরে দুটো গরু বিক্রির পর শুক্রবার দেখেন হাট গরু শূণ্য তাই তৃতীয় গরুটির চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন।

আগামী শনিবার ঈদুল আজহা। তাই কোরবানীর জন্য পশু কিনতে শেষ মুহূর্তে ক্রেতারা ভিড় করছেন রাজধানীর বিভিন্ন হাটগুলোতে। কিন্তু বিভিন্ন এলাকার হাটগুলোতে গিয়ে ক্রেতারা গরু না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ঘুরছেন এক হাট হতে আরেক হাট। শুক্রবার সকাল হতে এ সংকট আরও তীব্র হয়েছে। রাজধানীর গাবতলী, কমলাপুর, শনির আখড়া, দয়াগঞ্জ, পোস্তগলা সহ কয়েকটি হাট ঘুরে এ সংকট দেখা গেছে।

গরুর দাম বাড়তি থাকায় খোশ মেজাজে বিক্রেতারা

হাটে হাটে ঘুরছেন অনেকে

শেষ মুহূর্তে একটু কম দামে পছন্দসই ভালো গরু কিনতে পরিবার নিয়ে পশুর হাটে আসছেন অনেকেই। ফলে ক্রেতার চাপে গরুর সংকট দেখা দিয়েছে রাজধানীর হাটগুলোতে। এবার ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। বৃহস্পতিবার রাত হতেই হাটের গরু রাখার নির্ধারিত জায়গাগুলো বেশির ভাগ ফাঁকা দেখে নিরাশ হয়ে অনেকেই বাড়িতে ফেরত যাচ্ছিলেন। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে এসে কাঙ্ক্ষিত পশু কিনতে পারছেন না অনেক ক্রেতাই।

যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা সেকেন্দার মির্জা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় জুরাইন হাটে গিয়ে গরু না পেয়ে ফেরত আসি। সামান্য কিছু গরু ছিল, ব্যাপারীরা ক্রেতা বেশি দেখে অতিরিক্ত দাম হাকাচ্ছিল। দয়াগঞ্জ, শনির আখড়া হাটে আসলাম। এখনও গরু কিনতে পারিনি। দেখি সাইনবোর্ড কিংবা নারায়ণগঞ্জ থেকে কোন গরু কিনতে পারি কিনা।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটের ছোট-মাঝারি পশু রাখার নির্ধারিত জায়গাগুলো ও বেধে রাখার বাশগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। ফলে ক্রেতারা কিনতে পারছেন না কাঙ্ক্ষিত পশু। বিশেষ করে গরুর দাম বাড়তি। আকারে পছন্দ হলেও দামে বিস্তর ফারাক বলছেন ক্রেতারা।

দাম নিয়ে চলছে বাকবিতণ্ডা

কমলাপুর হাটে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতা ও বেপারীর বাকবিতণ্ডা চলছে। ক্রেতা মইনুল হোসেনের দাবি কয়েক ঘন্টা আগে একদাম ১ লাখ ৫০ বলেছিল বেপারী। তখন ১ লাখ ৩০ হাজার বলেছিল। পরে হাট ঘুরে এসে বেপারীর দামে গরু কিনতে চাইলে বেপারী বলে ১ লাখ ৭০ এর নীচে গরু বিক্রি হবে না।

তবে বেপারী জুয়েল রানা জানান, গরুর দড়ি ছাইড়া দেয়া মানে নতুন করে দাম করা। দাম ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়ে কমে। উনি দাবি না রেখেই তখন চলে গেছিল। এমনও হইতে পারে কয়েক ঘন্টা পর দাম আরও বাড়বে। আবার কমবারও পারে।

গরু যা কিছু মিলছে, সেগুলোর দাম নিয়ে ব্যাপারী-ক্রেতাদের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই দামে না মেলায়, বেঁকে বসা ব্যাপারিকে বোঝাচ্ছেন কেউ কেউ! বিক্রেতাদের দিক থেকে আরও একটু লাভের আশায় এখনো দর-দাম, দড়ি টানাটানি চলছেই।

জরুরী ভিত্তিতে হাটে আসছে গরু

এদিকে হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে গরু আসতে থাকে। জুরাইন শ্মশান ঘাট হাটে এমনই ২২ টি গরু নিয়ে এসেছেন কালু মিয়া। ঝিনাইদহ থেকে তিনি এই গরুগুলো এনেছেন। তিনি বলেন, সপ্তাহ আগে ৩৭ টা গরু আনছি। কালকার মধ্যে সব বেইচ্যা ফেলছি। এখন ডিমান্ড বাড়ায় বাড়তি দাম দিয়া এলাকার গেরেস্তর গরু দ্রুত কিনা আনছি। দাম ভাল পাইলে হাটের চলতি কম দামে ছেড়ে দিব।

জরুরী ভিত্তিতে গরু আনছেন অনেকে

অনেকেই হাট ছেড়ে সামনে বালুর টিলায় দাড়িয়ে আছেন। নতুন ট্রাকে করে গরু আসলে হাটে ওঠার আগেই গরু কিনবেন। তবে সেখানেও বাড়তি দামই চাওয়া হচ্ছে। এদিকে হাট কর্তৃপক্ষ মাইকে বারবারে ঘোষণা দিচ্ছে যে হাটে নতুন করে গরু আসছে। ফলে দাম নিয়ে যেন ক্রেতারা চিন্তা না করে। ক্রেতারা যেন হাটে আসে গরু ক্রয় করার জন্য। 

ছাগল,খাসির দামও নাগালের বাহিরে

গরুর বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে ছাগল,খাসি ও ভেড়ার দামেও। হাটগুলোতে ছাগলে দাম বেড়েছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। গরুর সংকটের কারনে অনেকেই একই বাজেটে খাসি কিংবা ছাগল খুঁজছিল। কিন্তু দাম বাড়ায় এখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কি করবে।

শনির আখড়া হাটে এমনই ক্রেতা হাশেম মিয়া। তারা তিন ভাই ভাগে কোরবানি দিয়ে থাকে। গরুর দাম বাড়তি বিধায় তিনজন খাসি কেনার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু খাসির দাম বেশি দেখে এখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

তিনি জানান, তিনজনে এক লাখ টাকার মধ্যে গরু কেনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এই বাজেটে ভাল গরু না থাকায় আলাদা ভাবে কোরবানি দিতে খাসি কিনতে আসি। কিন্তু খাসির দামও এখন আকাশচুম্বী। সব মিলিয়ে কি করব বুঝতে পারছি না।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা এক কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গতবছরের চেয়ে চার লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং দুই হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু। কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আছে আট লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বছর ভারতীয় গরু না ঢুকতে পারায় এবং বড় গরুর চাহিদা কম হওয়ায় ছোট ও মাঝারি গরুর উপর চাপ পড়েছে। তাই এবার গৃহস্ত ও খামারীরা ভালো লাভ পেয়েছেন।

Link copied!