শেষ কবে বিদেশ গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৯:২৬ পিএম

শেষ কবে বিদেশ গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া?

ছবি: সংগৃহীত

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে, গত কয়েকদিন থেকেই, আলোচনায় রয়েছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন, খালেদা জিয়া। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরই, মুক্তি পান তিনি। তড়িৎগতিতে, ইস্যু করা হয়েছে, তার পাসপোর্ট। বিদেশ যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলেও, শোনা যাচ্ছ। কিন্তু তারপরও খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে দেরি হচ্ছে কেনো, এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বরাত দিয়ে, দেশের একাধিক জাতীয় গণমাধ্যম গত কয়েকদিনে ধরে সংবাদ প্রকাশ করছে যে; উন্নত চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশ নিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে তার পরিবার। তার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকসহ, অন্যান্য সফরসঙ্গীদের ভিসা প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে।

সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবর প্রকাশ করে যে, গত ৭ বা ৮ নভেম্বর খালেদা জিয়া লন্ডনের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন। লং ডিসট্যান্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে প্রথমে তাকে নেয়া হবে, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কিংবা জার্মানি যাবেন। তবে সংবাদমাধ্যমগুলোর সেই প্রতিবেদন সঠিক হয়নি। কারণ, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এখনো দেশেই রয়েছেন। 

অবশ্য বিএনপি নেতারা এখনো বলছেন যে, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন, যে কোনো সময় বিদেশ নেওয়া হবে তাকে। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে দৃঢ়চেতা ভূমিকার জন্য ‘আপোষহীন নেত্রী’ হিসেবে উপাধি পেয়েছেন খালেদা জিয়া। ৭৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিক লিভার সিরোসিস, হৃদ্রোগ, ফুসফুসে জটিলতা, আর্থরাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
মাঝে কারাবন্দি থাকার কারণে দীর্ঘদিন বিদেশে যেতে পারেননি খালেদা জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এখন বিদেশ যাত্রা করলে এটি হবে, দীর্ঘ সাত বছরেরও বেশি সময় পর, তার দেশের বাইরে যাওয়া। এর আগে দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিদেশ গিয়েছিলেন তিনি। 

সর্বশেষ তিনি বিদেশ ভ্রমণ করেন ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ওই সময় প্রায় দেড় মাসের মতো লন্ডনে থাকেন তিনি। 

এর দুই বছর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর, ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। সেবারও তিনি সেখানে চোখ ও পায়ের চিকিৎসা করান। লন্ডনে থাকেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। ২০১৫ সালে তারেক রহমানসহ পরিবার এবং প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইদ উদযাপন করেন বেগম জিয়া। ৬৫ দিন লন্ডনে অবস্থানের পর দেশে ফিরেন তিনি।  

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে দণ্ডপ্রাপ্ত হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চেরিটেবল ট্রাস্ট-এর দুর্নীতি মামলায় সাজা পাওয়ায় তাকে কারাগারে যেতে হয়। দুই বছর তাকে রাখা হয় পুরোনো ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারের একটি ভবনে। এরপর বিশ্বজুড়ে হানা দেয় করোনাভাইরাস মহামারি। ২০২০ সালের মার্চে মহামারির শুরুতেই এক আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে তার দণ্ড সাময়িক স্থগিত করেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেয়া হয় মুক্তি। তবে দুটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। প্রথমত তিনি দেশেই তাকে চিকিৎসা নিতে হবে। আর দ্বিতীয়ত, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না তিনি। 

এরপর অবশ্য খালেদা জিয়াকে আর কারাগারে যেতে হয়নি। নিয়মিতভাবে সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরমধ্যে একাধিকবার খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে, তাকে বিদেশে উন্নত চিকিত্সার জন্য পাঠানোর দাবি জানানো হলেও নানা কারণ দেখিয়ে তা নাকচ দেয় তখন আওয়ামী লীগ সরকার।


খালেদা জিয়াকে এভাবে বাসায় রেখেই ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপিবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চারবারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। অবশ্য ভোটের সাত মাস পরই আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৬ আগস্ট খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করে, মুক্তির আদেশ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কারামুক্তির খবর পান তিনি। পরদিনই নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। 

এরপর দ্রুততম সময়ে তার পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। গত ২১ আগস্ট হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন তিনি। মুক্তি পেলেও অসুস্থতার কারণে, স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। ২৪ ঘণ্টাই রয়েছেন চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে।খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে গত কয়েকবছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন বিএনপির নেতারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তাকে বিদেশ যেতে বাধা দেয়। এতে আরও জোরালো দাবি তোলেন বিএনপি নেতারা। অবশেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তার বিদেশ যাওয়ার পথ খুলেছে অবশেষে। কিন্তু, তার বিদেশ যাওয়ার সব পথ উন্মুক্ত হলেও, এখন কেনো দেরি হচ্ছে, তা অবশ্য পরিষ্কার না। 

সর্বশেষ গত রোববার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, কিছু প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হলেই বেগম খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যাবেন। আমির খসরু আরও  বলেন, ম্যাডাম বিদেশ যাচ্ছেন। কিন্তু আরও কিছু কাজ বাকি রয়ে গেছে। যাওয়ার জন্য কিছু প্রক্রিয়া থাকে, সেই কাজগুলো চলছে। সেই কাজ সম্পন্ন হলেই উনি যাবেন।

আরও পড়ুনঃ লন্ডনে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

তবে ঠিক কবে নাগাদ খালেদা জিয়া বিদেশ যাবেন, তা অবশ্য বলতে পারেননি বলতে পারেননি বিএনপি নেতা আমির খসরু। তিনি ধারণা দিয়েছিলেন এক সপ্তাহ পরে প্রক্রিয়া শেষ হবে এবং তারপর যাবেন। অবশ্য সেই এক সপ্তাহও শেষ হতে চলেছে।

Link copied!