আর্জেন্টিনার রেকর্ড-ভাঙা পারফরম্যান্স ও ব্রাজিলের নান্দনিক ফুটবল

আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের দাপুটে জয়, মেসির হ্যাটট্রিক

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১৬, ২০২৪, ০২:৪৪ পিএম

আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের দাপুটে জয়, মেসির হ্যাটট্রিক

আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের দাপুটে জয়। সোর্সঃ সংগৃহীত

দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের ইতিহাসে আজ একটি ঐতিহাসিক এবং মহাকাব্যিক দিন। আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল, এই দুই ফুটবল পরাশক্তির সংঘর্ষে ভরপুর এক স্বর্ণালী সন্ধ্যা, যেখানে আর্জেন্টিনা বলিভিয়ার বিরুদ্ধে বিধ্বংসী ৬-০ ব্যবধানে জয়লাভ করেছে, অন্যদিকে ব্রাজিল পেরুকে পরাজিত করেছে ৪-০ ব্যবধানে। এই দাপুটে জয় শুধুমাত্র একটি স্কোরলাইন নয়, বরং ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে এক অনন্য রোমাঞ্চ এবং গর্বের অনুভূতি সৃষ্টি করেছে।

আর্জেন্টিনার রেকর্ড-ভাঙা পারফরম্যান্স

বুয়েন্স আইরেসের মনুমেন্টালে প্রবেশ করতেই যেন শুরু হয় একটি নতুন মহাকাব্য। হাজার হাজার সমর্থকের উল্লাস, পতাকা নাড়ানো এবং উজ্জ্বল আলোর ঝলক—এ যেন এক ফুটবল মেলা। আর এই দৃশ্যে একক মহাতারকা লিওনেল মেসির উজ্জ্বল উপস্থিতি। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই স্বপ্নের সূচনা। লাওতারো মার্তিনেজ প্রথম গোলটি করেন, কিন্তু এর পর থেকে যেন সকল চোখ ছিল মেসির দিকে।

মেসি প্রতিটি বলকে নিজের হাতে নিয়ে সোনালী রূপে রূপান্তরিত করেন। প্রথম গোলের জন্য ১৯তম মিনিটে মার্তিনেজের পাস নিয়ে বলিভিয়ার গোলকিপার গিয়ের্মো ভিসকারাকে পরাস্ত করেন। এরপর মার্তিনেজকে সহজ একটি গোলের সুযোগ করে দেন। মাঠে এক অসাধারণ সিম্ফনি, যেখানে ফুটবল ছিল নাচের মতো। প্রথমার্ধের শেষে জুলিয়ান আলভারেজের জন্য মেসির লম্বা ফ্রি-কিক পাস যেন একটি শিল্পকর্ম—স্কোর ৩-০!

দ্বিতীয়ার্ধে মেসি আবারও চমক দেখান। থিয়াগো আলমাদা গোল করে, আর তারপর মেসি নিজে গোল করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। শেষ মুহূর্তে তার বাম পায়ের অসাধারণ গোল যেন আর্জেন্টিনার জয়কে সোনালী পাথরে লিখে রাখার মতো।

এই জয়ের ফলে আর্জেন্টিনা ১০ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে বাছাইয়ের টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে। কলম্বিয়া ও উরুগুয়ে যথাক্রমে ১৯ ও ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তাদের পিছনে রয়েছে। আজকের ম্যাচটি আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করেছে, যা অনেক দিন মনে রাখা হবে।

ব্রাজিলের নান্দনিক ফুটবল

একই দিনে, ব্রাজিলও ফুটবলের সুরেলা সুরের মাধ্যমে পেরুর বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করেছে। ব্রাসিলিয়াতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে, পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ৪-০ ব্যবধানে জয়লাভ করেছে। রাফিনিয়া যেন জাদুকরী আক্রমণের নেতৃত্ব দেন, দুটি পেনাল্টি থেকে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন।

ব্রাজিলের প্রথম গোলটি আসে ৩৮তম মিনিটে, যখন পেরুর ডিফেন্ডার কার্লোস জামব্রানো হাত দিয়ে ফাউল করেন, যা ভিএআর দ্বারা নিশ্চিত করা হয়। রাফিনিয়া সেই পেনাল্টিটি অবিশ্বাস্য দক্ষতায় সফলভাবে গোল করেন। তারপর ৫৪তম মিনিটে আবারও পেনাল্টি পেয়ে রাফিনিয়া গোল করেন, এবার জামব্রানোর ফাউলের কারণে।

ম্যাচের সেরা মুহূর্ত ছিল আন্দ্রেয়াস পেরেইরার ৭১তম মিনিটের অসাধারণ ভলি, যা ব্রাজিলের সৃজনশীল আক্রমণের গৌরবকে প্রকাশ করে। তখন দর্শকদের মধ্যে এক আনন্দ উল্লাস শুরু হয়, মনে হয় যেন ফুটবলই তাদের জীবন। তিন মিনিট পর, লুইজ হেনরিকও বক্সের বাইরে থেকে বাম পায়ে একটি দারুণ গোল করেন, যা তার জন্য টানা দ্বিতীয় ম্যাচে গোল।

এই জয় ব্রাজিলকে পাঁচটি জয় এনে দিয়েছে এবং তারা ১০ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে রয়েছে, গোল পার্থক্যে উরুগুয়ের পিছনে।

ভবিষ্যতের পথ

যেমনভাবে বাছাইপর্ব এগিয়ে যাচ্ছে, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল উভয়ই ফুটবলের নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। এই দুই দলের সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করছে একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা, যেখানে শীর্ষ ছয়টি দল সরাসরি ২০২৬ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে, এবং সপ্তম স্থানে থাকা দলটি আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফের মাধ্যমে সুযোগ পেতে পারে।

ফুটবল প্রেমীরা এখন আশা করছেন, এই মহাকাব্যিক যাত্রা আগামী ম্যাচগুলোতে নতুন রূপ নেবে। প্রত্যেক ম্যাচেই হবে নতুন নাটক, নতুন ঘটনা। মাঠে মেসি ও রাফিনিয়ার মতো তারকারা তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যাবে, এবং তাদের খেলার প্রতি ভক্তদের ভালোবাসা আরো বাড়বে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের জয়যাত্রা যেন অটুট থাকে, এই কামনায় ফুটবল প্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

Link copied!