বিসিএস পরীক্ষা বন্ধসহ ১২ দফা সুপারিশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ১৭, ২০২১, ০৯:৫৯ পিএম

বিসিএস পরীক্ষা বন্ধসহ ১২ দফা সুপারিশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের

কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে দেশে ফের লকডাউন, আসন্ন বইমেলা ও বিসিএস পরীক্ষা স্থগিত, একদিন ঈদের ছুটিসহ ১২ দফা সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত মঙ্গলবার এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে লিখিতভাবে জানানো হয়। অধিদপ্তর মনে করে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসব বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

গত ডিসেম্বরের পর সংক্রমণের মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকলেও চলতি মার্চের শুরু থেকে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার সোমবারও ৯ শতাংশ পেরিয়ে গেছে, যা দুই মাস আগে ৩ শতাংশের নিচে নেমেছিল।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মিনি কনফারেন্স রুমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১২টি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

এগুলো হলো- ১. সম্ভব হলে কমপ্লিট লকডাউনে যেতে হবে। সম্ভব না হলে ইকোনমিক ব্যালান্স রেখে যেকোনো জনসমাগম বন্ধ করতে হবে। ২. কাঁচা বাজার, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, শপিংমল, মসজিদ, রাজনৈতিক সমাগম, ভোট অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, পবিত্র রমজান মাসের ইফতার মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান সীমিত করতে হবে। ৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেগুলো বন্ধ আছে সেগুলো বন্ধ রাখতে হবে। অন্যান্য কার্যক্রম সীমিত রাখতে হবে। ৪. যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা (বিসিএস, এসএসসি, এইচএসসি, মাদ্রাসা, দখিলসহ অন্যান্য) বন্ধ রাখতে হবে। ৫. কোভিড পজিটিভ রোগীদের আইসোলেশন জোরদার করা। ৬. যারা রোগীদের কন্ট্রাকে আসবে তাদের কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখা ৭. বিদেশ থেকে বা প্রবাসী যারা আসবেন তাদের ১৪ দিনের কঠোর কেয়ারেন্টিনে রাখা এবং এ ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর সহায়তা নেওয়া ৮. আগামী ঈদের ছুটি কমিয়ে আনা ৯. স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আইন প্রয়োজনে জোরদার করা ১০. পোর্ট অব এন্ট্রিতে জনবল বাড়ানো, মনিটরিং জোরদার করা, ১১. সব ধরনের সভা ভার্চুয়াল করা এবং ১২. পর্যটন এলাকায় চলাচল সীমিত করা।

সভায় আলোচিত ১২টি প্রস্তাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র এবং রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নজমুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, প্রস্তাবগুলো ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এসব প্রস্তাবের পাশাপাশি কয়েকজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও ৫টি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। সেখানে তারা বলেছেন- বইমেলা বাতিল করতে হবে, বদ্ধস্থানে বা কক্ষে ইফতার পার্টি না করতে নির্দেশনা দিতে হবে, ঈদের ছুটি কমিয়ে ১ দিন করতে হবে, কক্সবাজারসহ পর্যটন এলাকায় যাতায়াত সীমিত করতে হবে এবং মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজের ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আগের মতো কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসবে। মাস্ক না পরলে-স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করা হবে। এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে ইতোমধ্যে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত ১৩ মার্চ সারাদেশে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। উপসচিব মো. শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর হার গত কয়েক মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবার মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

Link copied!