বইমেলা ২০২৩: দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা যেখানে বই পাবেন ফ্রি, পড়তে পারবেন অনায়াসে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩, ১০:৩২ পিএম

বইমেলা ২০২৩: দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা যেখানে বই পাবেন ফ্রি, পড়তে পারবেন অনায়াসে

চোখে দেখতে পান না তো কী হয়েছে, জ্ঞানের তীব্র পিপাসা থামিয়ে রাখতে পারেনি আনিকা ইবনাত নামিরাকে। বইমেলা উপলক্ষে নিত্যনতুন গল্পের বই বাজারে আসলে আরেকজনের সহায়তা নিয়েই সেই বই পড়ার চেষ্টা করেন তিনি।

তার মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বই পিপাসুদের জন্য ব্রেইল বই তৈরি করেছে ‘স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা’। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিনামূল্যে বই বিতরণও করেন তারা। এবার বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে শুধুমাত্র একটি স্টলই  রয়েছে যা স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার। 

স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার স্টলটিতে কোনো বই বিক্রি হয় না। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য এখানে বসে বই পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে কেউ চাইলে নাম রেজিষ্ট্রেশন করে বিনামূল্যে বই বাসায় নিয়ে যেতে পারেন।

বইমেলার এই পাঁচ দিনে প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ জন করে স্টলটিতে এসেছেন এবং বই পড়েছেন বলে জানালেন আরেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নাহিয়ান বুশরা।

২০০৮ সাল অর্থাৎ বই প্রকাশনার শুরু থেকেই যুক্ত আছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নাহিয়ান বুশরা। ছোটোবেলা থেকে চোখে দেখেন না তবে এ বাঁধা কোনোভাবেই আটকাতে পারেনি তাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ছায়ানট থেকে নজরুলের ওপরও একটি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন।

নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, "এ প্রকাশনা মূলত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্রেইল বই পড়ার অধিকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয় পুরো বাংলাদেশে সেই বিষয়ে কাজ করে। আমরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও সবার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি এজন্য এই সংগঠন আমাদের নাম দিয়েছে দৃষ্টিজয়ী। আমরা জয়ীদের মতোই এগোচ্ছি।"

শুধু বই নয়, এই স্টলের পাশে রয়েছে দুটি কালো রংয়ের বক্স।এটি সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জন্য যে কিভাবে স্পর্শ করে অনুভব করেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা।

১৫ বছর আগে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু হয় স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার। ২০০৯ এ প্রথম শিশুতোষ ব্রেইল বই প্রকাশ করা হয় এই প্রকাশনা থেকেই।

এই প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা লেখক নাজিয়া জাবীন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন,"২০০৮ সালে যাত্রা শুরুর পরের বছরই আমরা প্রথম বই প্রকাশ করি। এরপর থেকে আমরা বেশ ভালো সাড়া পাই।ব্রেইল পাঠকরা বই নিতে আসেন আমাদের কাছে। তারপর ২০১১ সালে আমরা চিন্তা করি বইমেলায় আসার।

তাদের বইমেলায় আসার ব্যাপারে অনেকেই সহায়তা করছেন জানিয়ে নাজিয়া জাবীন আরও বলেন, “অনেক লেখক ও প্রকাশক আমাদের সাহায্য করেছে। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটাই,  মানুষকে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করা। নতুন কোনো বই এলে ওরা (দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সদস্যরা) পড়তে চায়, জানতে চায়। আমি সব লেখক প্রকাশককে বলবো, ওদের জন্য বছরে একটা হলেও ব্রেইল বই বের করতে।”

এই সংগঠনের অন্যতম একটি নিয়ম, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দৃষ্টিহীন,অন্ধ, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বলে পরিচয় করিয়ে দেন না। তাদের ভাষায় এরা সবাই দৃষ্টিজয়ী, আর দৃষ্টিজয়ীদের নিয়েই বিশ্বজয় করতে চান স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা।

Link copied!