করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পারিবারিক উপার্জন কমেছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। যার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির চেয়ে অর্থনৈতিক ঝুঁকির কথা চিন্তা করেও মানসিক স্বাস্থ্যর অবনতি হয়েছে। বর্তমানে দেশের ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়েছেন। ব্র্যাক, ডেটা সেন্স এবং উন্নয়ন সমন্বয়-এর এক যৌথ সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্ব পরিবার দিবস
১৫ মে (শনিবার) বিশ্ব পরিবার দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘পরিবার ও নতুন প্রযুক্তি’। করোনার প্রভাবে চাকরি ও ঘরোয়া কাজে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রযুক্তির মাধ্যমে মিল বন্ধনের লক্ষে এই প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে।
প্রযুক্তিতে পিছিয়ে দেশের পরিবার
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কেবল ৩৪ শতাংশ পরিবারের স্মার্টফোন রয়েছে এবং ৫৪ শতাংশ পরিবারের টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে। অতএব, এর নিচের অংশে বসবাসকারী শিশুরা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে। এছাড়া নতুন প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায়ও তারা নেই বলে জানায় অর্থনীতিবিদরা।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের উপার্জন কমেছে
দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ শ্রমশক্তি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের। আইএলওর গ্লোবাল ওয়েজ রিপোর্ট-২০২০-২১-এ বলা হয়েছে, ২০১০-১৯ সালে বাংলাদেশে শ্রমিকের বার্ষিক উৎপাদনশীলতা বাড়লেও প্রকৃত ন্যূনতম মজুরি উল্টো কমেছে। এই সময়ে দেশে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও প্রকৃত ন্যূনতম মজুরি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রম মর্যাদা নিশ্চিত হয়নি।
ব্রাকের সমীক্ষায় বলা হচ্ছে,করোনার কারনে পরিবারের উপার্জন প্রায় ৭৪ শতাংশ কমে গেছে এবং ১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন বা ফিরে আসছেন। ‘কোভিড-১৯ এবং জাতীয় বাজেট ২০২০-২০২১: নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক এই সমীক্ষার ফল অনলাইনে প্রকাশ করা হয়।
চাকরি হারিয়েছে অনেক পরিবারের সদস্য
কোভিড-১৯-এর কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারের মাঝে ৩৪.৮ শতাংশ পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য চাকরি হারিয়েছেন। গত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গড় পারিবারিক উপার্জন প্রায় ৭৪ শতাংশ কমে গেছে। দিনমজুরসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
দেশে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র (দৈনিক আয় ১.৯ ডলার)। এদের মধ্যে নতুন করে চরম দরিদ্র হয়ে পড়া পরিবারগুলোও রয়েছে। উচ্চ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকা চরম দরিদ্রের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৩ লাখ এবং উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ৩ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ।
প্রণোদনার সুবিধা পায়নি শ্রমিকরা
বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষ হিসেবে বটম অফ দি পিরামিডে শুধু শ্রমিকেরা নয়, অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও আছেন। প্রণোদনা দেয়ার পরেও শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ বেতন দেওয়া হয়েছে। তাদের বাসা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ তো কমেনি। তাই এই মুহূর্তে বেঁচে থাকার জন্য যাদের প্রয়োজন বেশি তাদের প্রণোদনা বা ভর্তুকির ব্যবস্থা রাখতে হবে।’
বেড়েছে মানসিক সমস্যাও
করোনা মহামারীতে সংক্রমণের আতঙ্ক, চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, মৃত্যুভয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, বেকারত্বের কারণে মানসিক সমস্যা বেড়েছে। এসময় লকডাউনে আত্মহত্যা ৪৪ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে কমেছে মানসিক রোগের চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতাও। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, আইসিডিডিআরবি ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আইইডিসিআর বলছে, কোভিড মহামারীর সময় বাংলাদেশে পরিচালিত কয়েকটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশের মধ্যে বিষন্নতা, ৩৩ শতাংশের মধ্যে দুঃশ্চিন্তার লক্ষণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা চাপ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক অনলাইন গবেষণায় দেখা গেছে, এ সময়ে ৭১ শতাংশ মানুষের মধ্যে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।