চীনের তৈরি সিনোভ্যাক টিকার দুই ডোজ নেয়ার পরও ইন্দোনেশিয়ায় কমপক্ষে ২০ জন ডাক্তার ১০ জন নার্স কোভিডে ভুগে মারা গেছেন। দ্রুত ‘বুস্টার ডোজ’ অর্থাৎ সিনোভ্যাকের তৃতীয় একটি ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ার ২৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে আট শতাংশেরও কম লোক এ পর্যন্ত টিকা পেয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি করোনাভাইরাসের ‘ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে’র প্রভাবে সংক্রমণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের নাগরিকেরা টিকা নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছেন। রাজধানী জাকার্তার বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে শত শত মানুষ লাইনে দাড়িয়ে টিকা নেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে ভ্যাকসিন পেলেও চীনের তৈরি সিনোভ্যাক আসলে কতটা সুরক্ষা দিতে পারছে বা পারবে তা নিয়ে ইন্দোনেশিয়াতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এ অবস্থায় বিপর্যয় ঠেকাতে বিশেষজ্ঞেরা বরোনা চীনের সিনোভ্যাক টিকার তৃতীয় ডোজ নেওয়ার ব্যাপারে বিশেষ জোর দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির রোগতত্ত্ববিদ ড. ডিকি বুডিম্যান করোনা টিকার বুস্টার ডোজ নেওয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের একের পর এক ঢেউ আসছে। ফলে বুস্টার শট খুবই জরুরি। সিনোভ্যাকের সুরক্ষার মাত্রা বাড়ানো দরকার, বিশেষ করে এখন যেভাবে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের মত নতুন ধরণের করোনাভাইরাসের প্রকোপ চলছে।’
ইউনিভার্সিটি অব ইন্দোনেশিয়ার রোগতত্ত্ববিদ ড ত্রি ইউনিস মিকো বুস্টার ডোজ বিষয়ে বলেন, ‘স্বাস্থ্য-কর্মীদের টিকা দেওয়া হয়েছে জানুয়ারিতে অর্থাৎ ছয় মাস আগে এবং, তার মতে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।’
অবশ্য ইন্দোনেশিয়ার এয়ারলাঙ্গা ইউনিভারসিটির শিক্ষক ড উইধু পুর্নোমো তৃতীয় ডোজ টিকার বিরোধীতা করে বলেন, ‘এটা ঠিক যে আমরা দেখেছি পুরোপুরি টিকা নেয়ার পরও বেশ কজন স্বাস্থ্য কর্মী মারা গেছেন যেটা ঘটার কথা ছিল না। যদি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সিনোভ্যাক অকার্যকর হয়, তাহলে তৃতীয় ডোজ টিকা দেওয়াও অর্থহীন।’
ইন্দোনেশিয়ার ভ্যাকসিন কর্মসূচি প্রকল্পের মুখপাত্র ড. সিতি সাদি তারমিযিও বলেন, ‘তৃতীয় ডোজ দেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র নেই। ডব্লিউএইচও কিছু বলছে না।। সুতরাং আমাদের উচিৎ অপেক্ষা করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই ডোজের পর সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন কতটা সুরক্ষা দিচ্ছে তা নিয়ে আমাদের বিজ্ঞানীরা একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাচ্ছে। ঐ ট্রায়াল এখন তৃতীয় পর্যায়ে। ফলাফল পেলে তৃতীয় ডোজ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হবে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি ব্যবহারের জন্য সিনোভ্যাক টিকা অনুমোদন করেছে। ডব্লিউএইচও সে সময় বলেছিল, চীনের টিকা সিনোভ্যাক কোভিডের বিরুদ্ধে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দেয় বলে পরীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। আরো বলা হয়, পরীক্ষায় একশ ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সিনোভ্যাক টিকা কোভিডের বিপজ্জনক উপসর্গ এবং হাসপাতালে ভর্তি ঠেকাতে কাজ করেছে।
চীনের টিকা তৈরিকারক সিনোভ্যাক বায়োটেক কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘তাদের টিকার দুই ডোজ নিলে কোভিডের বিপজ্জনক উপসর্গ থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে। তৃতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার প্রতিক্রিয়া নিয়ে এখন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালানো হচ্ছে এবং প্রাথমিক ফলাফল ‘আশাব্যঞ্জক।‘
ইন্দোনেশিয়াতে বর্তমানে প্রতিদিন ২০ হাজারেরও বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে।তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এই হিসাবের চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি কারণ রাজধানী জাকার্তার বাইরে কোভিডের পরীক্ষার সুযোগ সীমিত। এখন পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় ২১ লাখ কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ৫৭,০০০। হাসপাতালগুলোতে জায়গার সংকট এবং অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গত মে মাস থেকে ইন্দোনেশিয়ায় শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের হার তিনগুণ বেড়ে গেছে। এমনকি ছোট বাচ্চারাও কোভিডে মারা যাচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।