দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হলেও জনগণের মধ্যে এখনও এই টিকাভীতি রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তারা হয়ত আরও একটু সময় নিতে চাইছেন। অনেকে বলছেন, গণটিকাদান কার্যক্রমের প্রথম দিনে যারা টিকা নিয়েছেন তাদের সার্বিক অবস্থা জেনে তারপর টিকা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। অনেকে আবার এমনও বলছেন, টিকা নেওয়ার পর ভারতে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়টি তাদের টিকা নেওয়ার ব্যাপারে ভাবিয়ে তুলেছে।
গত রবিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনার গণটিকাদান কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন ও করোনার টিকা নিজেও নেন। এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ ভিআইপি ব্যক্তিরা একই দিন টিকা নিয়েছেন।
গণটিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি এবং হাইকোর্টের ৪৮ বিচারপতিও টিকা নিয়েছেন।
টিকা নেওয়ার পর প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘ভালো আছি। কোনো ভয় নেই। দেশবাসীকে আহবান করছি যখনই আপনার তারিখ আসবে টিকাটি নিয়ে নেবেন। এটা আপনাদের কর্তব্য।’
মন্ত্রিসভার অনেকেও জনগণকে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন। তারপরও জনগণ টিকা নেওয়ার ব্যাপারে তেমনভাবে এগিয়ে আসছে না। যারা টিকাদানের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদের সংখ্যাও উল্লেখ করার মত নয়। সরেজমিনে টিকাদান কেন্দ্রগুলো ঘুরেও এমন তথ্য মিলেছে।
রাজধানীর জুরাইনে নাদিম হায়দার সজল নামে এক তরুণ জানান, গণটিকার প্রথম দিনেই যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের সার্বিক অবস্থা জেনে-শুনে-বুঝে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবো।
তিনি বলেন, আমি এখনও টিকা নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশনও করিনি। সরকার সুরক্ষা নামে যে অ্যাপস চালু করেছে, তা ঠিকমত কাজ করছে না। এই অ্যাপস আরো সহজ করার জন্যও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
শিহাব শেখ নামে এক ব্যবসায়ী দ্য রিপোর্টকে জানান, করোনাভাইরাস টিকা নিতে চাইলেও একটু ভীতি কাজ করছে। করোনা টিকা নিয়ে দেশে ছড়ানো বিভিন্ন গুজবের কথাও তুলে ধরে এই ব্যবসায়ী আরো বলেন, পত্রিকায় দেখলাম করোনা টিকা নেওয়ার পর ভারতে প্রায় অর্ধশত লোক মারা গেছেন। এ খবরে আমি ও আমার বন্ধুমহল খুবই চিন্তিত টিকা নেওয়ার ব্যাপারে।
প্রধান বিচারপতিসহ দেশের ভিআইপিদের করোনা টিকা নেওয়ার পর অন্যরা ভয়ভীতি পাবেন কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভারতের ব্যাপারটি আমাদের দেশের জনগণের মাঝে বেশি ছড়িয়েছে। তবে দেশের ভিআইপি ও বিশিষ্টজনেরা টিকা নেওয়ায় এখন সাধারণ জনগণও টিকা নিতে উৎসাহিত হবেন। আমিও এখন টিকা নিতে রাজি। এখন ভাবছি, আমি টিকা নেয়ার জন্য খুব দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করবো।
অনেকে আবার গণটিকা শুরুর পরও টিকা নিতে চাইছে না। মরিয়ম বেগম এদেরই একজন। রাজধানীর মুরাদপুরের বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী এই নারী জানান, টিকা আমি নেবো না। আমার ভয় করে। হায়াত মওত আল্লাহর হাতে। যতদিন বাঁচি, আমি স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলবো।’
তবে করোনা টিকা নেওয়ার ব্যাপারে জনগণকে অধিকহারে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর পক্ষে মত দিয়েছেন অনেকে। তাদের মতে, জনগণের ভয়ভীতি দূর করতে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে মিডিয়াগুলোও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।