শহরাঞ্চলে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে নতুন বিল্ডিং, অ্যাপার্টমেন্ট ও কর্পোরেট অফিসের সংখ্যা। একই সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে এসির চাহিদা। এরই ফলশ্রুতিতে বেড়েছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এয়ার কন্ডিশনার বা এসির ব্যবহারের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি প্রায়শ এসি বিস্ফোরণের ঘটনার কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এসি বিস্ফোরণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
এসি মূলত যেসব কারণে বিস্ফোরিত হয়
• এসির কনডেন্সারে ময়লা থাকলে কমপ্রেশারে হাই টেম্পারেচার এবং হাইপ্রেশার তৈরি হয়ে থাকে।
• এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ থাকলে হাইপ্রেশার তৈরি হয়ে কমপ্রেশার ব্লাস্ট হতে পারে।
• সঠিক স্পেকের পাওয়ার ক্যাব্ল ব্যবহার না করে থাকলে।
• কমপ্রেশারের লিমিটের চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট চার্জ করলে এবং সঠিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করলে হাইপ্রেশার তৈরি হয়।
• একনাগাড়ে আট ঘণ্টার বেশি এসি চালু রাখা উচিত না।
• সঠিক রেটিংয়ের সার্কিট-ব্রেকার ব্যবহার না করলে।
• সঠিকভাবে এসির ভ্যাকুয়াম না করলে।
এসি-বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা পেতে
• এসির কনডেন্সার নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
• কমপ্রেশারে হাই টেম্পারেচার এবং হাইপ্রেশার তৈরি হচ্ছে কি না, পরীক্ষা করা।
• কমপ্রেশারে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রেফ্রিজারেন্ট আছে কি না, তা অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দ্বারা পরীক্ষা করা এবং লিমিটের চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করা।
• সঠিকভাবে এসির ভ্যাকুয়াম ও রেটিংয়ের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করতে হবে।
• দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার পর এসি চালু করার আগে একজন দক্ষ সার্ভিস-এক্সপার্ট দিয়ে এসি পরীক্ষা করে নেওয়া।
• এসি ইন্সটল করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রুমের আকার।
• এছাড়া বজ্রপাত বা বৃষ্টির সময়ে এসি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ভালো আর্থিং ব্যবস্থা না থাকলে এটিও এসির দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অলোক কুমার মজুমদার বলছেন, অনেকে রুমের লোড অনুপাতে এসি ব্যবহার করেন না। ফলে এসিটি অনেকক্ষণ ধরে চলে, সেই সঙ্গে অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। নিম্নমানের এসি কিনলে সেগুলোর ভেতরে ফ্যান, তারের, বিদ্যুতের ব্যবস্থাগুলো ঠিক থাকে না। ফলে সেখানেও অনেক সময় আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
অনেক সময় উইন্ডো এসির সামনে জানালা বা দরজার পর্দা চলে এলে বাতাস চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়। সেটিও এসিকে গরম করে তুলতে পারে বলে তিনি জানান।
এসি কেনার সময় অবশ্যই স্টার দেখে কিনতে হবে। ১ স্টার রেটিং মানে এসিটি এক বছরে ব্যবহার করে ৮৪৩ ইউনিট, অন্যদিকে ৫ স্টার মানে হলো এসিটি ব্যবহার করে ৫৫৪ ইউনিট। সোজা হিসাব হলো, যত বেশি স্টার; তত বিদ্যুৎ খরচ কম। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় করার জন্য ইনভার্টার এসি ব্যবহার করতে পারেন। এসির টেম্পারেচার সম্ভব হলে ২২ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখুন। তাহলেও খানিকটা বিল কম আসবে।
অপরদিকে শীতকালে এসি অচল থাকার পর গরমের শুরুতে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করে চালানোর কারণেই বিস্ফোরণ ঘটছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে বছরে অন্তত তিনবার এবং বিশেষভাবে শীতকালের শেষে এসির তদারকি করার তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা।