নভেম্বর ১০, ২০২১, ০৭:২২ পিএম
'আমি তোর মাঠে ট্রলি চালালে তুই কী করবি? তুই আমার ক্ষমতা কত জানিস?’- বলে ক্ষমতার দম্ভে নিমেষেই ১০ বছরের গবেষণা কার্যক্রমে ‘পাঁকা ধানে মই’ দিলেন যুবলীগ নেতা। সোমবার (০৮ নভেম্বর) রাজশাহীর তানোর উপজেলার তানোর পৌরসভা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহাব রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকজয়ী কৃষি গবেষক নুর মোহাম্মদের সামনেই তার গবেষণার জমিতে পাকা ধানের ওপর ট্রলি চালিয়ে দেন।
তানোর থানায় করা অভিযোগে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেছেন, এতে তার প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এ ঘটনায় আজ (বুধবার, ১০ নভেম্বর) পর্যন্ত পুলিশ মামলা নেয়নি।
এদিকে, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, যুবলীগ নেতা এখন নুর মোহাম্মদকে সমঝোতার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তারা আরো জানান, ওয়াহাবের লোকজন নুর মোহাম্মদকে তার গবেষণা মাঠের পাশে আটকে রেখে মারধরও করে।
নুর মোহাম্মদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি তার দুই বিঘা জমিতে ৬২ জাতের ধান আলাদাভাবে চাষ করেছিলেন। এভাবে ট্রলি চালিয়ে দেওয়ায় সবগুলো জাতের ধান একটি অন্যটির সঙ্গে মিশে গেছে।
তিনি বলছেন, এতে তার ১০ বছরের গবেষণা বিফলে গেল।
প্রায় ৬০ বছর বয়সী নুর মোহাম্মদ মাধ্যমিক পাস করার পর থেকেই ধান চাষ শুরু করেন। বরেন্দ্র অঞ্চলে খরায় ধান নষ্ট হতে দেখে তিনি গবেষণা শুরু করেন। তিনি তার মাটির বাড়িকে পরিণত করেন গবেষণাগারে। এই গবেষণায় সরকারি কারিগরি সহায়তাও পেয়েছেন তিনি।
এ পর্যন্ত নুর মোহাম্মদ ৫ টি খরা সহনশীল জাতসহ ২০০টি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। গত ১০ বছর ধরে তিনি ৬২টি ধানের জাত নিয়ে গবেষণা করছেন৷
কৃষিতে অবদানের জন্য নূর মোহাম্মদ ২০০৫ সালে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ সালে তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার পান।
উল্লেখ্য, নুর মোহাম্মদের খেতের পাশেই যুবলীগ নেতা আব্দুল ওহাব ও তার অনুসারী অঞ্জন মালাকার ও মো. টিটুর ধানখেত আছে। সোমবার (০৮ নভেম্বর) বিকেলে অঞ্জন মালাকার তার কাটা ধান ট্রলিতে বোঝাই করে গবেষণা মাঠের উপর দিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে নুর তাকে বাধা দেন। নুর অঞ্জনকে জমির অন্য পাশ দিয়ে ট্রলি নিয়ে যেতে অনুরোধ করেন।
এসময় যুবলীগ নেতা ওয়াহাব সেখানে গিয়ে নুরকে হুমকি দিয়ে গবেষণা মাঠের ওপর দিয়ে ট্রলি চালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওয়াহাব তার লোকদের নুরকে ধরে ট্রলির পথ থেকে সরিয়ে দিতে বলে। এসময় তাকে ধরে মারধরও করা হয়।