ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২, ০৪:৩৭ পিএম
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ঘাসে অতিরিক্ত নাইট্রেট ও মিশ্র ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ১১ জেব্রার মৃত্যু হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রথম থেকেই জেব্রার মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছ বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়।
বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এসব তথ্য জানান।
তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “ঘাসে অতিরিক্ত নাইট্রেটের উপস্থিতি ও মিশ্র ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে ১১টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে বলে তদন্তে পাওয়া গেছে। সাফারি পার্কে প্রাণীগুলোকে যে ঘাস দেওয়া হয়, সেটার মধ্যে অতিরিক্ত নাইট্রেটের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এ কারণেই জেব্রাগুলো মারা গেছে।”
সাধারণত ঘাসে ইউরিয়া সার দেওয়া হয় এবং এটা ছিটানোর পরপর পশুকে খেতে দেওয়া হলে এমনটি হতে পারে জানিয়ে মো. শাহাব উদ্দিন আরও বলেন, “ সার ছিটানোর নির্দিষ্ট সময় পর পশুদের ঘাস খেতে দেওয়া হয়। সেটা তিন বা চার সপ্তাহ পর খেতে দিতে হয়। এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া হলে এ রকম হতে পারে।”
প্রথমে যে তিনটি জেব্রার মৃত্যু হয়েছিল, সেগুলোর প্রকৃত কারণ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল জানিয়ে বন ও পরিবেশমন্ত্রী বলেন, “তারা জেব্রাগুলোর মৃত্যু আঘাতজনিত কারণে হয়েছে- এ মিথ্যা প্রতিষ্ঠা করার জন্য মৃত তিনটি জেব্রার পেট ধারালো কিছু দিয়ে কেটে দেয়। যা তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে আরও গভীর তদন্তের পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।”
কোনো প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জিডি করার প্রচলন থাকলেও এ ক্ষেত্রে থানায় কোনো জিডি করা হয়নি যা রহস্যজনক-উল্লেখ করে মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, “পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব গত ২২ জানুয়ারি সাফারি পার্ক পরিদর্শন করেন। সে দিন পর্যন্ত ৮টি জেব্রা মারা গেলেও প্রকল্প পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি কর্মকর্তা বা কর্মরত অন্য কেউ জেব্রার মৃত্যুর ঘটনাটি সচিবকে অবহিত করেননি। এতে প্রতীয়মান হয় প্রথম থেকেই জেব্রার মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে।”
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, “ঘটনাটি অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য ও সরকারি কর্মচারী আচরণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, যা দায়িত্ব অবহেলার শামিল। এসব কারণে তদন্ত কমিটির মতামত বিবেচনায় নিয়ে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ফৌজদারি মামলা ও বিভাগীয় মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ৯টি জেব্রার মৃত্যু হয়। পরে আরও দুটি জেব্রা মারা যায়। ৯টি জেব্রার মৃত্যুর পর সাফারি পার্ক প্রকল্পের পরিচালক মো. জাহিদুল কবির গণমাধ্যমে বলেছিলেন, “হঠাৎ তারা দল থেকে আলাদা হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। পেট ফুলে গিয়ে মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে। এক সময় মারা যায়।“