এপারে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের ভাদাই। ওপারে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের নরপাড়া। মাঝে যমুনার মৃতপ্রায় শাখা নদী লৌহজং। সেই নদীর বুকে বানানো হয়েছে কোটি টাকার সেতু। কিন্তু এক পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো কাজেই আসেনি এই সেতুটি। ফলে স্থানীয় মানুষজন আর যান পারাপারের ভোগান্তিরও লাঘব ঘটেনি।
জানা যায়, আশপাশের আট গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে গোপালপুর উপজেলা পরিষদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, ৪০০ গজ দীর্ঘ নদীর মাঝখানে ৬০ ফিট দীর্ঘ সেতু নির্মাণের পর দুই পাড়ে নতুন সংযোগ রাস্তা করার কথা ছিল। প্রায় আট টন কাবিটা প্রকল্পের চালের বিনিময়ে সেতুর টাঙ্গাইল অংশে মাটি ভরাট করে নতুন সংযোগ রাস্তাও করা হয়। কিন্তু ব্রিজের জামালপুর অংশে মাটি ভরাট হয়নি, রাস্তাও হয়নি।
ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রহিম জানান, পিংনা ইউনিয়ন পরিষদকে একাধিকবার অনুরোধ সত্ত্বেও ওই অংশে মাটি ভরাট বা রাস্তা করা হয়নি। এমনকি ওই অংশে সেতু পর্যন্ত বাঁশের সাঁকো নির্মাণেও তারা অনীহা দেখায়। এ অবস্থায় মানুষের জনদুর্ভোগের কথা ভেবে ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ প্রতি বছর ৩০/৩৫ হাজার টাকা খরচ করে ওই অংশে ২০০ গজ দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দেয়।
ভাদাই গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ ফুল মিয়া জানান, বিশাল জনপদ সোনামুই, হরিষা ও ভাদাই গ্রামের ৭ হাজার মানুষ যারপর নাই অবহেলিত। গ্রামে কোনো উচ্চবিদ্যালয় নেই। গ্রামের চার শতাধিক ছাত্রছাত্রী সেতু পাড়ি দিয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলার বাশুরিয়া শামসুন্নাহার হাইস্কুলে পড়ালেখা করে।
এছাড়া এলাকার বাসিন্দারা পিংনা-ভূঞাপুর সড়ক হয়ে জেলাসদর টাঙ্গাইল ও ঢাকায় যাতায়াত করে। স্থানীয় কৃষিপণ্য বাজারে সরবরাহ করতে গেলেও ওই সেতু পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু সেতুর এক অংশে বাঁশের সাঁকো থাকায় যান পারপার করা যায় না। ফলে সেতুটি কৃষকদের কোনো কাজেই আসছে না।
গোপালপুর উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা বলেন, জনদুর্ভোগের অবসানে উপজেলা প্রশাসন সেতু ও এক অংশে সংযোগ রাস্তা করেছে। কিন্তু সরিষাবাড়ী অংশে রাস্তা না হওয়ায় সেতুর সুবিধা পাচ্ছেন না মানুষ।
পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহের হোসেনও ওই সেতু পারাপারে জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, জামালপুর অংশে মাটি ভরাট ও রাস্তা নির্মাণে বাধা থাকায় কাজ করা যায়নি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি ভরাট ও রাস্তা নির্মাণ হবে।
গোপালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার গণমাধ্যমকে জানান, জামালপুর জেলা প্রশাসন ইতিবাচক মনোভাব দেখানোয় সেতুর ওই অংশে খুব তাড়াতাড়ি সংযোগ রাস্তা হবে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।