টয়লেটে নারী সংবাদকর্মীর ভিডিও ধারণের অভিযোগ, শাহবাগ থানায় ডায়রি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২২, ২০২১, ১২:৪১ এএম

টয়লেটে নারী সংবাদকর্মীর ভিডিও ধারণের অভিযোগ, শাহবাগ থানায় ডায়রি

'মাগুরা এগ্রিকালচার পার্ক লিমিটেড' নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিপুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নারীদের টয়লেটে লুকিয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠেছে। 

সোমবার (২১ জুন) বিকেলে  এই ঘটনার অভিযোগ জানায় 'দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ' (https://thereport.live/) অনলাইন পত্রিকার দুই নারী সাংবাদিক। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিক জানান, “অফিসের ফ্লোরে কমন টয়লেটে প্রবেশের পর মাথার ওপর শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি একটি মোবাইল ঠেলে ভিতরে দেওয়া হচ্ছে।  এ সময় আমি চিৎকার করলে সেখান থেকে মোবাইলটি সরিয়ে নিয়ে ঐ ব্যক্তি দ্রুত চলে যায়। টয়লেট থেকে বের হয়ে খোঁজাখুঁজি করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি অফিসকে জানালে ভবন কর্তৃপক্ষকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করতে বলা হয়।”

প্রত্যক্ষদর্শী জানে আলম জানান, “আমি পুরুষ টয়লেটে থাকা অবস্থায় একজন নারীর চিৎকার শুনে বের হয়ে এসে একজনকে দেখতে পাই। সে মেয়েদের টয়লেটের দিক থেকে এসেছে বলে জানতে চাই, এখানে কী করছেন? তখন তিনি আমাকে ঠেলে সরিয়ে বের হয়ে যান। বাহিরে এসে তাকে আর দেখতে পাইনি।”

সিসি টিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, বিকেল ৪টা ৪২ থেকে ৪টা ৫০ মিনিটের মধ্যে সাদা জামা পরা এক ব্যক্তি টয়লেটে যাচ্ছে এবং সেখান থেকে দ্রুত গতিতে বের হয়ে এই ভবনের পঞ্চম তলায় 'মাগুরা এগ্রিকালচার পার্ক লিমিটেড'-এর অফিসে প্রবেশ করছে। এ সময় যেই ব্যক্তিকে সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায় তার নাম বিপুল ইসলাম।'

একই ভবনের চতুর্থ ফ্লোরে একটি বেসরকারি অফিসে কর্মরত জানে আলম জানান, মাগুরা এগ্রিকালচার পার্ক লিমিটেডের অফিসে প্রবেশ করে যখন জানতে চান- 'এখানে কেউ প্রবেশ করেছে কিনা', তখন অফিসটি থেকে জানানো হয়, 'কেউ এখন প্রবেশ করেনি'। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ বলছে ভিন্ন কথা। অভিযুক্ত সেই ব্যক্তি টয়লেট থেকে দ্রুত গতিতে তখন এই অফিসে প্রবেশ করে।

এ বিষয়ে প্রথমে সিসিটিভি ফুটেজ চাইলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে তা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। পরবর্তীতে দ্য রিপোর্টের আইটি বিভাগ ও  ভবন মালিকদের সহায়তায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পর আসল চিত্র প্রকাশ পায়। এরপর ঘটনাটি জানানো হয় শাহবাগ থানাকে।

ঘটনাস্থল তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বক্তব্য লিখছেন শাহবাগ থানার এসআই মোস্তফা কামাল। ছবি: দ্য রিপোর্ট
ঘটনাস্থল তদন্ত শেষে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য লিখছেন শাহবাগ থানার এসআই মোস্তফা কামাল। তাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেল। ছবি: দ্য রিপোর্ট

শাহবাগ থানার এসআই মোস্তফা কামাল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ফুটেজ দেখেন। পরবর্তীতে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন-অর-রশিদ জানান, "আমরা প্রাথমিকভাবে অভিযোগ খতিয়ে দেখেছি। এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়রি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীকাল সাইবার অপরাধ বিষয়ক একটি তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবে। অভিযুক্তের মোবাইল সাইবার ইউনিটে পাঠানো হবে। প্রমাণ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব”।

এদিকে এ বিষয়ে থানায় খবর দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তারা হুমকি দিয়ে বলেন, “তোমার কোম্পানির মালিক এবং আমরা এক সঙ্গে থাকবো, দেখবো কার পাওয়ার বেশি।”

এ সময় নিজেদের অফিসের কর্মচারীকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তারা। প্রাথমিকভাবে সিসি টিভি ফুটেজ দেখালেও পরবর্তীতে পুলিশ এবং ভুক্তভোগীদের কোন সহায়তা করেনি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

পরে মাগুরা এগ্রিকালচার পার্ক লিমিটেড-এর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর অভিযুক্ত বিপুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় তারা। বিপুল ওই কোম্পানির গাড়ির চালক বলে জানান কোম্পানির হেড অব অপারেশন্স রসুল আহমেদ রসুল। বিপুলের বিরুদ্ধে আইনী যে কোনো ব্যবস্থা নিতে তারা সহযোগিতা করবেন বলেও দ্য রিপোর্টকে আশ্বস্ত করেন তারা।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলামটরে অবস্থিত 'নাভানা জোহুরা স্কয়ার' ভবনের ৫ম তলায় এক ঝাঁক তরুণ সাংবাদিক নিয়ে যাত্রা শুরু করে 'দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ'।

Link copied!