পথশিশুদের প্রতি ৩ জনে ১ জন ঘুমন্ত অবস্থায় যৌন নিপীড়নের শিকার: বিবিএস জরিপ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ১০, ২০২৩, ০৭:৫৬ পিএম

পথশিশুদের প্রতি ৩ জনে ১ জন ঘুমন্ত অবস্থায় যৌন নিপীড়নের শিকার: বিবিএস জরিপ

ক্ষুধায় খাবার না পাওয়া, অপুষ্টি, অসুখ-বিসুখ, পথচারী ও বিত্তবানদের কাছে হাত পেতেও কোনও সাড়া না পাওয়া -এসবই দেশের কয়েক মিলিয়ন পথশিশুর নিত্যসঙ্গী। তবে এর চেয়েও ভয়ঙ্কর তথ্য হলো পথশিশুদের প্রতি ৩ জনে ১ জন ঘুমন্ত অবস্থায় পথচারী ও ছিম্নমূল বয়স্ক পুরুষ কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।

ঘুমের এই সময়টা তাদের জন্য খুবই আতঙ্কের হয়ে থাকে এবং এই পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে অনেক শিশু রাতে ঘুমায় না। এদের প্রতি ৪ জনে ১ জন ধুমপানে অভ্যস্ত ও ১২ শতাংশ মাদক ও অন্যান্য নেশায় জড়িয়ে পড়ে।

দেশে পথশিশুদের ৮২ ভাগ ছেলে ও অন্যরা মেয়েশিশু। সার্ভে অন স্ট্রীট চিলড্রেন ২০২২ এ এসব তথ্য তুলে এনেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ইউনিসেফ এর সহায়তায় এ জরীপকাজ সম্পন্ন করা হয়।

সোমবার জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন বিবিএস এর সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক মাসুদ আলম।

এসময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের  সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, বিবিএস এর মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান ও ইউনিসেফ এর বাংলাদেশ প্রধান মি. শেলডন ইয়েট উপস্থিত ছিলেন।

ইউনিসেফ প্রধান বলেন, "জরিপে প্রাপ্ত তথ্য বেদনাদায়ক ও মানবেতর। এ চিত্র শুধু আমাদেরকে জরুরী পদক্ষেপের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় না একইসাথে তাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা ও সমর্থনও দরকার।"

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, "প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে এ জরিপ  কাজে লাগবে। এতোদিন পথশিশুদের নিয়ে কোনও তথ্য ছিলো না। এখন এ ব্যপারে পদক্ষেপ নেয়া যাবে।"

পথশিশু হিসেবে যাদের উল্লেখ করা হয়েছে তাদের অধিকাংশ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, কেউ কেউ অনাথ, কেউ আবার পিতামাতার পরিচয় জানে না। আবার কারো পরিবার খুবই নিন্ম আয়ের এবং তারা রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন পার্কে দিন কাটায়।

৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের এ জরিপের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও অনেক মা ৫ বছরের কম সন্তান নিয়ে পথেই জীবনযাপন করে।

জরিপে ফলাফল তুলে ধরে বলা হয় পথশিশুদের শতকরা ১৩ ভাগ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ও ৬ ভাগ এতিম।

এদের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগের বেশি শিশু পাবলিক প্লেস ও রাস্তায় নিরাপত্তাহীনভাবে ঘুমায়। পাটের বস্তা, পলিথিন বা কার্টুন ও পরিত্যক্ত কাগজ দিয়েই হয় তাদের ঘুমের আয়োজন।

পথশিশুরা ক্ষুধা নিবারণের জন্য যেসব কাজ করে তার মধ্যে রয়েছে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ, ভিক্ষাবৃত্তি ও চা-দোকান বা বিভিন্ন কারখানায় শ্রম দেয়া।

জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে, প্রতি চার জনে তিন জন বা ৭১.৮ শতাংশ পথশিশু পড়তে বা লিখতে পারে না। শতকরা ৭৯ জন কোনও কাজের খোঁজ করতে পারে না এবং এরা জীবন ও ভবিষ্যত সম্পর্কিত ধারনা নিয়ে বেঁচে থাকে।

এরা প্রায় সময়ই অসুখ বিসুখে ভূগে এবং বিনা চিকিৎসায় থাকে। ফলাফলে বলা হয় জরিপকালীন সময়ের আগের তিন মাসে অর্ধেক পথশিশু জ্বর, ঠাণ্ডা-কাশি, মাথাব্যথা ও পানিবাহিত রোগে ভূগেছে।

মোট ৭ হাজার ২শ' পথশিশুকে এ জরিপের আওতায় আনা হয়। জরিপ ফলাফলে দেশে পথশিশুর মোট সংখ্যা তুলে ধরা না হলেও এদের সংখ্যা কয়েক মিলিয়ন হতে পারে বলে ধারনা দেয়া হয়।

Link copied!