মায়ের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দাফনের কথা জানিয়ে গেছেন সিরাজুল আলম খান

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ১০, ২০২৩, ১১:৪০ এএম

মায়ের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দাফনের কথা জানিয়ে গেছেন সিরাজুল আলম খান

রাজনীতির ‘রহস্যপুরুষ’ হিসেবে পরিচিত প্রখ্যাত রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খানকে (দাদাভাই) নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন

শনিবার সিরাজুল আলম খানের ছোট ভাইয়ের মেয়ে ব্যারিস্টার ফারাহ খান গণমাধ্যমকে বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হবে।

ফারাহ খান আরও বলেন, চাচা বলে গেছেন– ‘মৃত্যুর পরে আমাকে কোথাও রাখার দরকার নেই। আমাকে যেন ডিসপ্লে করা না হয়। আমার জন্য হাজার হাজার ফুল আসার দরকার নেই। আমি দেশটা স্বাধীন করতে চেয়েছিলাম। আমি স্বাধীন করতে পেরেছি। সেটাই আমার বড় অর্জন। আমি কারও কাছে কিছু চাই না।’

‘প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান’ বইতেও সিরাজুল আলম খান তাঁর শেষ ইচ্ছা এভাবে প্রকাশ করেছেন– ‘আমার মৃত্যুর পর কোনো শোকসভা হবে না। শহীদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ। যত দ্রুত সম্ভব নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আমার গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে হবে মরদেহ, যা ঢাকা থাকবে একটা কাঠের কফিনে। মায়ের একটা শাড়ি রেখে দিয়েছি। কফিনটা শাড়িতে মুড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে, মায়ের কবরে।’

এদিকে, সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর পর তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হোক– তা চায় না পরিবার। তাঁর ছোট ভাই ফেরদৌস আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, “ভাই সব সময় প্রচারণার বাইরে থেকেছেন। তিনি বলে গেছেন, তাঁকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা না হয়। এমনকি দাফনের সময় তাঁকে কাফনের বদলে মায়ের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দাফনের ইচ্ছার কথা জানিয়ে গেছেন।”

 এসময় তিনি  আরও বলেন, “ ভাই বলে গেছেন-মায়ের শাড়িটাই আমার কাছে পতাকা। আমি এ পতাকা নিয়েই চলে যেতে চাই।”

প্রসঙ্গত,  শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সিরাজুল আলম খান।

জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল ইসলাম খারের উদ্যোগেই ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠিত হয়ভ  তাঁর উদ্যোগেই। কখনও নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন। কখনও জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতিও দিতেন না। আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে রহস্য পুরুষ হিসেবে পরিচিতি পান। দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে আসা চিরকুমার সিরাজুল আলম খান রাজধানীর কলাবাগানে ভাইদের সঙ্গেই থাকতেন।

সিরাজুল আলম খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাসদ শনিবার শোক পালন করছে। এর অংশ হিসেবে ভোর ৬টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

Link copied!