যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর সাথে প্রথম বৈঠকেই স্বাধীন বাংলাদেশকে অবিলম্বে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যও ভারতকে অনুরোধ জানান তাজউদ্দীন। কিন্তু তখন কোনও সরকার গঠন হয়নি। এ কারণে স্বীকৃতিও দেওয়া হয়নি।
আগে সরকার, পরে স্বীকৃতি
প্রথম বৈঠকেই স্বাধীন বাংলাদেশকে অবিলম্বে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যও ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। কিন্তু সেই সময় ভারতের পক্ষ থেকে ‘আগে সরকার, পরে স্বীকৃতি’র পাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল।
দিল্লিতে তাজউদ্দীন আহমদের সফরসঙ্গী ও বিএসএফ কর্মকর্তা গোলক মজুমদার পরে জানান, ইন্দিরা গান্ধী তখন বলেছিলেন, ‘ঠিক সময়ে স্বীকৃতি মিলবে— এখনও তার সময় হয়নি।’
তাজউদ্দীন আহমদের সাথে প্রথম সাক্ষাতেই ইন্দিরা গান্ধী জানতে চেয়েছিলেন, ''শেখ মুজিব কোথায়?''
তানভীর মোকাম্মেলের তথ্যচিত্র 'তাজউদ্দীন আহমেদ : নি:সঙ্গ সারথি'—তে মি. মজুমদার আরও জানিয়েছেন, মিসেস গান্ধী আগে তাদের একটি প্রবাসী সরকার গঠনের পরামর্শ দেন সেই সময়।
ইন্দিরা ও তাজউদ্দীনের প্রথম সাক্ষাৎ
১৯৭১ সালে ২ ই এপ্রিল যখন তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে যান তখন তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য অর্থনীতিবিদ আনিসুর রহমান ও রেহমান সোবহানকে ডাকা হয়। 'তাজউদ্দীন আহমেদ : নি:সঙ্গ সারথি’ তথ্যচিত্রে ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ইন্দির গান্ধীর সাথে দেখা করার আগে আমরা একটি খসড়া চূড়ান্ত করি, যে কি নিয়ে আলোচনা হবে। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বল হয় যে, এটা আমাদের যুদ্ধ। আমরা চাই ভারত এতে জড়াবে না। এই স্বাধীনতার লড়াই আমাদের নিজেদের এবং এটা আমরা নিজেরাই করতে চাই।’
তবে নিজস্ব মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলার জন্য তাদের যে প্রশিক্ষণ, আশ্রয় ও অস্ত্র সরবরাহের দরকার হবে তাজউদ্দীন তা সেদিনই পরিষ্কার করে দেন। অচিরেই লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর আশ্রয় ও আহারের ব্যবস্থা করার জন্যও মিসেস গান্ধীকে অনুরোধ জানান তিনি।
দ্রুতই হয় সরকার গঠন
গোলক মজুমদার তথ্যচিত্রে আরও বলেন, ভারতে সরকার হলে হবে না, বাংলাদেশেই সরকার গঠন করা লাগবে। এজন্য আমরা যথাযথ স্থান খুঁজছিলাম। তখন মুজিবনগর আদর্শ মনে হলো যেখানে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী আঘাত হানতে পারবে না।
যদিও দশ তারিখেই প্রবাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হল। বারো তারিখে তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলেন। মার্চের ৩০ তারিখ বিকেলে তাঁর সাথেই ভারতে প্রবেশ করা আমীর-উল ইসলাম তৈরি করলেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের খসড়া।
ঠিক পাঁচ দিনের মাথায়, ১৭ এপ্রিল ভারতীয় সীমান্তের কাছে মেহেরপুরের একটা গ্রাম বৈদ্যনাথতলায় ক্যাবিনেটের সদস্যরা সবাই শপথ নিলেন, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
বাংলাদেশকে তখনই কূটনৈতিক স্বীকৃতি না-দেওয়া হলেও ভারতীয় ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ তাঁর আকরগ্রন্থ 'ইন্ডিয়া আফটার গান্ধী'-তে লিখেছেন, ভারতের গোপন সরকারি নথিপত্রে কিন্তু মার্চ-এপ্রিল থেকেই মুক্তিযুদ্ধকে 'স্ট্রাগল ফর বাংলাদেশ' বলে উল্লেখ করা হচ্ছিল।