র‌্যাবের তৎপরতায় ঘরে ফিরে আসা তরুণীরা যা জানালেন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ২, ২০২৩, ১০:০৬ পিএম

র‌্যাবের তৎপরতায় ঘরে ফিরে আসা তরুণীরা যা জানালেন

উগ্রবাদের দীক্ষা নিয়ে বাড়ি ছাড়া নয়জন তরুণ-তরুণীকে চট্টগ্রাম থেকে আটকের পর ঢাকায় এনে পরিবারের কাছে তুলে দিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।এদের মধ্যে পাঁচজন নারী ও চারজন পুরুষ।

সোমবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাবের সদরদপ্তরে ‘নবদিগন্তের পথে’ শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ওই তরুণ-তরুণীদের পরিবারের কাছে তুলে দেন র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন। এ সময় প্রত্যেককে ফুল ও বই উপহার এবং নগদ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

এই তরুণ-তরুণীদের বয়স ১৭ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে পাঁচজন নারী।

র‌্যাবের বরাত দিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গত ২২ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এই ৯ তরুণ-তরুণী একযোগে ঘর ছেড়েছিলেন। খোঁজ না পেয়ে তাদের পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

জিডির তথ্যের ভিত্তিতে এবং র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-৮ এর সহযোগিতায় র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা গত ২৫ ডিসেম্বর তাদেরকে হেফাজতে নেয়।

ডি-র‌্যাডিকালাইজেশনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কাউন্সেলিং করা হয়। কাউন্সেলিংয়ে তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

ওই তরুণ-তরুণীরা র‌্যাবকে জানিয়েছে, তারা সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন দেশের মুসলিম নারী ও শিশুদের নির্যাতনের ভিডিও ও ছবি দেখে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। তারা ওই সব ভিডিও এবং ছবির লিংকগুলো শেয়ারের পাশাপাশি লাইক ও কমেন্ট করতেন। ওইসব ভিডিও ও ছবি শেয়ারকারী একজন তাদের ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠায়, এরপর তাদের নিয়ে ‘দুনিয়া কিয়ে মুসাফির’ নামের আরেকটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে যোগাযোগ গড়ে তোলে।

এরপর তাদের নয়জনকে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে নিয়ে যায় ওই ব্যক্তি, সেখানে বিভিন্ন ইসলামী ভিডিও এবং বিভিন্ন লেখকের বই দিতেন। এক পর্যায়ে তাদের নির্বিঘ্নে ধর্ম পালনে ‘হিজরত’ করতে রাজি করান বলে তারা র‌্যাবকে জানিয়েছেন।

টেলিগ্রাম গ্রুপের অ্যাডমিন ওই ব্যক্তির কথামতো তারা রাঙামাটির পাহাড়ি এলাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গত ২২ ডিসেম্বর বাড়ি ছেড়ে পরদিন চট্টগ্রামের একটি স্থানে একত্রিত হন।

তারা জানান, সেখান থেকে ওইদিনই বাসে করে রাঙামাটিতে গিয়েছিলেন তারা। সেখানে গিয়ে ভিড় দেখে তারা ‘হিজরতে’র জন্য অনুকূল নিরিবিলি কোনো স্থান না পেয়ে চট্টগ্রামে ফেরত আসেন।

পরদিন তারা সবাই বান্দরবান গিয়েও সুবিধাজনক স্থান না পেয়ে একই দিনই আবার চট্টগ্রাম ফেরত আসেন। এরমধ্যে একজন নারী সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। এ সময় তাদেরকে হেফাজতে নেয় র‌্যাব।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্থাটির দুই অতিরিক্ত মহাপরিচালক কামরুল হাসান ও ইমতিয়াজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক ছিলেন মুফতি মানসুর আহমাদ।

র‌্যাব জানায়, জঙ্গি দমনে শুধু আভিযানিক প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন গবেষণা ও প্রশিক্ষণের আলোকে সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তারা। ২০১৬ সালে গঠন করা হয় র‌্যাব ডি-র‌্যাডিকালাইজেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল (আরডিআরসি)। পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে র‌্যাব এর আগেও উগ্রবাদের বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত হওয়া ২১ জনকে ডি-র‌্যাডিক্যালাইজেশনের মাধ্যমে তাদের পরিবারে ফিরিয়ে দিয়েছে। 

Link copied!