‘দুদকে কোয়ালিটি সম্পন্ন লোকবলের অভাব’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৮, ২০২১, ০৬:৩৪ পিএম

‘দুদকে কোয়ালিটি সম্পন্ন লোকবলের অভাব’

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কোয়ালিটি সম্পন্ন লোকবলের অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, কমিশনের যে ধরনের লোক দরকার তেমন লোক নেই। যারা আছে তাদের আরও বেশি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেত হবে।

সোমবার (৮ মার্চ) কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে বিদায়ী অনুষ্ঠান ও ‘গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়’ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।  

তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনের সময় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চাপ বা প্রভাব ছিল না। দুদক সব ক্ষেত্রে জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। তবে আমরা সবাইকে একটি বার্তা দিতে পেরেছি, যে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। অনেক ক্ষমতাধর মানুষকে দুদকের বারান্দায় আসতে হয়েছে। কেউ অন্যায় করে রেহাই পাননি। এই বার্তাটি আমরা পৌঁছাতে পেরেছি। আমি চেষ্টা করেছি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদককে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে। আমি তৃপ্ত হতে পারিনি। জনগণের আস্থার প্রতিদান সেভাবে দিতে পারিনি।

দুদক কর্মকর্তাদের ঘুষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মানুষ নিয়ে কাজ করি, মানুষকে ডিল করা খুব সহজ কাজ নয়। মানুষ লোভ-লালসার ঊর্ধ্বেও নয়। যারা অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করা যায় কি না, এমন প্রশ্নে বিদায়ী চেয়ারম্যান বলেন, ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর হিসাব নেওয়ার পর আপনি কী করবেন? এর একটি আইন করা দরকার। আইনি কাঠামো নিয়ে আমরা চিন্তা করেছি। ইন্ডিয়াও তা করতে পারেনি সেভাবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা না করে একা কিছু করা যাবে না।

দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, দুদকের নখদাঁত নেই এটি এখন প্রাচীন কথা, দুদক এখন যথেষ্ট ক্ষমতাশালী। যে আইন আছে তাতে অনেক কিছু করা সম্ভব। তবে বিব্রতের বিষয়, সব দুর্নীতি দুদকের বিষয় বলে সাধারণ মানুষ মনে করলেও সেটি সত্য নয়। দুদকের কর্মজীবনে সফলতা ব্যর্থতা মূল্যায়নের দায়ভার দেন সাধারণ মানুষ, সুশীল সমাজ ও দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানের হাতে।

গণমাধ্যমকর্মীদেরকে কমিশনের গঠনমূলক সমালোচনা করতে আহ্বান জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এ সমালোচনা আমি চলে যাওয়ার পরেও করবেন। কোনো অসুবিধা নেই। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনাদের যা করার করবেন। ব্যক্তিগতভাবে যদি কিছু করে থাকি সেটারও সমালোচনা করবেন। এটা আমরা নিতে রাজি আছি। কমিশনের সফলতা যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে জনগণ, সুশীল সমাজ, এনজিও সবাই বিচার করবেন।

মেয়াদ শেষ হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমি অন্যদের মতো বলব না যে, দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে চলে যাচ্ছি। আমি বলব, এক বসন্তে হাসিমুখে এসেছিলাম, আরেক বসন্তে হাসিমুখে চলে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য২০১৬ সালের ১০ মার্চ দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামানের স্থলাভিষিক্ত হন। দুদকের চতুর্থ চেয়ারম্যান হিসেবে মঙ্গলবার (৯ মার্চ) তার মেয়াদ শেষ করবেন। বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের জুন মাসে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন ইকবাল মাহমুদ।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) সচিব করা হয়। এরপর ২০১২ সালে সরকার ‘সিনিয়র সচিব’ নামে নতুন পদ সৃষ্টি করলে আরও সাতজনের সঙ্গে ইকবাল মাহমুদও ওই পদ পান। সে সময় তিনি ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব। ওই বছর নভেম্বরে তিনি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পান।

Link copied!