পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি ছেড়ে দিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপির মানবিক পুলিশ খ্যাত কনস্টেবল শওকত হোসেন। গত ১৬ এপ্রিল তাঁর চাকরিচ্যুতির আদেশ জারি করেন সিএমপির বন্দর বিভাগের উপ-কমিশনার শাকিলা সোলতানা। আদেশের কপি পাঠানো হয় সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের দফতরেও। তবে তাঁর আগেই চাকরি না করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেন শওকত হোসেন। শওকত মানবিক কাজে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করার লক্ষ্যেই নাকি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শওকতের ওই চাকরি ছাড়ার খবরটি এরইমধ্যে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে।
এদিকে শওকত হোসেনের চাকরিচ্যুতির আদেশে বলা হয়েছে, টানা ৭১দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাঁকে। এর আগে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়ে মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা সম্ভব নয় জানিয়ে নিজেই লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানান শওকত হোসেন। এরপরই তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
সিএমপির উপ কমিশনার (সদর) আবদুল ওয়ারীশ গণমাধ্যমকে বলেন, যদিও কনস্টেবল শওকত হোসেন নিজেই চাকরি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন। তারপরও চাইলে নিয়মানুযায়ী চাকরিচ্যুতির আদেশের বিষয়ে আপিল করতে পারেন তিনি। এমনকি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালেও যেতে পারেন।
শওকত নিজেও ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন এ বিষয়ে। বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৩টায় ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, কখনও ভালো কিছুর জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তাই স্বেচ্ছায় নিজেকে সরিয়ে নিলাম, ইনশাআল্লাহ মানবতার কল্যাণে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিয়োজিত থাকবো।
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা শওকত হোসেন ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। চাকরির পাশাপাশি তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারামেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রামে অসহায়, দুস্থ ও বেওয়ারিশদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে তা ফেসবুকে প্রচার শুরু করেন। ‘বেওয়ারিশ সেবা ফাউন্ডেশন’ নামে বেসরকারি সংস্থা গড়ে তুলে আর্থিক অনুদানও সংগ্রহ করছেন তিনি। অনেকেই তাঁর এসব কাজের প্রশংসা করতেন। আবার চাকরি ফাঁকি দিয়ে এসব কাজ করা হচ্ছে, এমন সমালোচনারও শিকার হয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মাহাবুবুর রহমানের আদেশে মানবিক পুলিশ ইউনিটের যাত্রা শুরু হলে সে ইউনিটে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন কনস্টেবল শওকত। ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ডবলমুরিং এলাকায় এক ওয়াজ মাহফিলে অতিথি হিসেবে গিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন এই ‘মানবিক পুলিশ’। এ সময় তাকে দামপাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে কর্ণফুলী থানায় শাস্তিমূলক বদলি করা হয়।
গত ৭১ দিন ধরে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। চাকরির চেয়ে দুঃস্থ রোগী এবং পথেঘাটে অসুস্থ মানুষের সেবাকাজে বেশি মনোযোগী দেখা যায় তাকে। প্রতিদিন ফেসবুকে একাধিক ভিডিও আপলোড করেন।