এপ্রিল ৮, ২০২৫, ০৮:৩২ পিএম
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান। ছবি: আতাউর রহমান রাইহান/ইউএনবি
রোহিঙ্গা সংকটকে গাজা উপত্যকার সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের ঘাড়ের ওপর একটি গাজা বসে আছে। সেটি নিয়ে কারও মিছিল-মিটিং নেই।’
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। গেল ৩ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বৈঠক ও সফলতা নিয়ে কথা বলতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেসসচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিথ ছিলেন।
বাংলাদেশে যখন বিনিয়োগ সম্মেলন চলছে, তখন ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভের নামে বহুজাতিক কোম্পানির আউটলেটে হামলা চালিয়েছে একদল তরুণ। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস লক্ষ্য করছি, যখনই আমরা একটা ভালো কাজ করতে গেছি, হঠাৎ করে নানারকম সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। আমাদের ধারণা, আমাদের ভালো কাজগুলো ডিরেইলড (ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া) করারই একটা চেষ্টা হিসেবে আমাদের এখন ধারণা হচ্ছে। এটার একটা প্যাটার্ন দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গাজাতে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডে সারা বিশ্ব বিবেক ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশে তার প্রতিক্রিয়া হবে খুবই স্বাভাবিক। আমার কাছে সবচেয়ে বেদনাদায়ক যেটা মনে হয়, আমাদের ঘাড়ের ওপর একটি গাজা বসে আছে—রোহিঙ্গা। সেটা নিয়ে কারও মিটিং-মিছিল নেই, আলাপ-আলোচনা নেই। আছে, হচ্ছে,...এগুলো নিয়ে রাস্তায় নামা, লুটপাট করা। এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমাদের সমস্যার সমাধান আগে করতে হবে।’
‘পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকবে বাংলাদেশ মানুষ। আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামের সময় সারা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এটা আমাদের ঐতিহাসিক দায়, এই দায় আমাদের সবসময় মেটাতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
খলিলুর রহমানের ভাষ্য, “কিন্তু আমার ঘাড়ের ওপর একটা সমস্যা বসে আছে। নাকি রোহিঙ্গারা একটু কম মুসলমান? আর অন্যরা একটু বেশি মুসলমান। আমরা কিন্তু খুব লজ্জা লাগে, যখন বাইরের দেশে আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে ‘আপনাদের দেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তো কোনো কথাবার্তা নেই? তোমরা অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলো’।”
‘আমাদের অগ্রাধিকার আমাদের বুঝতে হবে। আমি সবাইকে আহ্বান করবো, দেখুন, বাইরের কথা...আলাপ আপনি নিশ্চয়ই করবেন। কিন্তু ঘরের সমস্যা, এটা নিয়ে প্রথম দাঁড়িয়ে যাবেন। তানাহলে আমরা দেশের স্বার্থ রাখতে পারবো না,’ বলেন তিনি।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এ সময়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত চলছে এবং এই নিন্দনীয় কাজের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আরও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
এতে আরও বলা হয়, দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ গত রাতে অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বিক্ষোভের সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করছে। এই সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। পরবর্তীতে গাজা যুদ্ধে আইডিএফের নির্বিচার হামলায় অর্ধলাখের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।