স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র : ৯৬ শতাংশই অপ্রকাশিত

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২৬, ২০২২, ১০:৫৪ এএম

স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র : ৯৬ শতাংশই অপ্রকাশিত

স্বাধীনতা যুদ্ধের অকাট্য ইতিহাসের জন্য তিন লাখ পৃষ্ঠার নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছরে মাত্র সাড়ে ১০ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের ১৫ খণ্ড দলিলপত্র প্রকাশ করা হয়। বাকি সাড়ে ৯৬ শতাংশের বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে ১৯৮৮ সালের বন্যার পানিতে। খোয়া গেছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মতো বিষয়ের মূল্যবান দলিলপত্রও। বর্তমানে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরে বিশেষ অক্সিজেন নিরোধক চেম্বারে কিছু দলিলপত্র সংরক্ষণে থাকলেও তা প্রকাশের কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

দলির রাখাতে মাত্র চারটি আলমারি

সেগুনবাগিচায় পুরো চারটি কক্ষে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না যে দলিলগুলোর, সেগুলো রাখতে জাতীয় জাদুঘরের চারটি আলমারি ও ১০টি ফাইল কেবিনেটের সবটুকু জায়গাও লাগেনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ নামে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নেওয়া প্রকল্পটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র ও ইতিহাস সংগ্রহের দ্বিতীয় প্রকল্প। প্রথম প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাত্র ছয় মাস পরে ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে গৃহীত প্রথম প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গঠন করা হয় জাতীয় স্বাধীনতার ইতিহাস রচনা পরিষদ। প্রকল্পের দপ্তর ছিল বাংলা একাডেমিতে এবং পদাধিকারবলে একাডেমির সেই সময়কার মহাপরিচালক মযহারুল ইসলাম হয়েছিলেন এর চেয়ারম্যান। তাই প্রকল্পটি গবেষকদের কাছে বাংলা একাডেমির ইতিহাস প্রকল্প নামে পরিচিত। 

স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্পের গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন, অল্প কিছু মানুষ নিজের থেকে দলিল দিয়েছেন, তাদের মধ্যে একজনের নাম বলতেই হয়, তিনি আমাদের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনেকে সহায়তাটুকুও করেননি। 

কার্যকরী পদক্ষেপ নেই মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের

ইতিহাসভিত্তিক দলিল প্রকাশ ও সংরক্ষণ, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যুদ্ধক্ষেত্র, বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিত করে সংরক্ষণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তেমন কোনো কাজ নেই। অথচ 'মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ' মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার মূল অভিলক্ষ্য (মিশন)।

এ বি তাজুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে চিঠি দিয়ে একটি আর্কাইভ করার অনুরোধ করেছিলেন বলে মুনতাসীর মামুন জানালেন। তখন প্রস্তাবটি আমলে নেওয়া হলেও পরে আর কিছু হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান আবু দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা বেশ কয়েকদফা চেষ্টা করেছি এই নথিপত্রগুলো যেন প্রকাশ করা হয়। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলে সেগুলো আর প্রকাশ করার উদ্যোগ নেয়নি। এছাড়া নাজুক অবস্থায় নথিপত্রগুলো থাকার কারনে এগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নিজেদের কিছু সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে নানান উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক করতে মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যেমন, তেমনি রাজাকার-আলবদরদেরও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। দলিলপত্র ও ইতিহাস সংগ্রহের কাজ আরও ত্বরান্বিত করা হবে। 

আরও দলিলপত্র অজানা রয়েছে

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিব্যদ্যুতি সরকার বলেন, দলিলপত্রের ১৫ খণ্ডে আসেনি, কিন্তু সংগৃহীত হয়েছিল এমন অনেক কিছুই নেই হয়ে গেছে। অন্তত জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত ও অপ্রকাশিত দলিলগুলোর মধ্যে যে নেই তা বলা যায়। 

তিনি বলেন, খুঁজলে এখনও অনেক অজানা দলিল মিলবে। সেই জন্য প্রধানত ভারতে খুঁজতে হবে। তবে আমেরিকা থেকে ইউরোপের বহু দেশে দলিল পাওয়া সম্ভব। দেশের তৃণমূলেও কাজ করতে হবে। মানুষের স্মৃতিতেও রয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের কথা।

প্রকল্পেই সীমাবদ্ধ দলিলপত্র 

সরকারি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পের তৃতীয়টি ছিল তৃণমূল পর্যায়ের ইতিহাস সংগ্রহের এবং সেই প্রকল্পে তৃণমূলের মানুষের কথা সংগ্রহ করা হচ্ছিল। ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির সেই সময়কার মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের চেষ্টায় প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। ২০০১ সালে গঠিত মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হয় এবং 'প্রাসঙ্গিকতা যাচাই'য়ের নামে প্রকল্পের পুরো পরিকল্পনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। পরে আওয়ামী লীগ বহুদিন ধরে ক্ষমতায় থাকলেও প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

Link copied!