আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৪:০৭ পিএম
দীর্ঘদিন ধরে চলমান রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানের জন্য বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার প্রভাব, বিশেষ করে আসিয়ানের সভাপতির ভূমিকাকে কাজে লাগাতে চাইছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, মালয়েশিয়ার শরণার্থী গ্রহণের অভিজ্ঞতা এবং আসিয়ানে নেতৃত্বপূর্ণ অবস্থান দেশটিকে একটি বিশেষ সুযোগ দিয়েছে, যা আঞ্চলিক সমাধানকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করতে পারে।
মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা বারনামার সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনুস বলেন, “আমরা আশা করি, মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার সময় তার প্রভাব ব্যবহার করবে, যেন আমরা এই সংকট সমাধান করতে সক্ষম হই।” সাক্ষাৎকারটি তার সরকারি সফরের শেষের আগে নেওয়া হয়। সাক্ষাৎকারে বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দুরার রাজ, ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সার্ভিসের সম্পাদক ভুন মিয়াও পিং এবং বারনামার ইকোনমিক নিউজ সার্ভিসের সহকারী সম্পাদক কিশো কুমারী সুশেদারাম উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ইউনুস সতর্ক করে বলেন, রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চলমান সংঘর্ষের কারণে রোহিঙ্গা সংকট আরও তীব্র হয়েছে, ফলে নতুন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন।
তিনি আরও বলেন, “গত ১৮ মাসে প্রায় দেড় লাখ নতুন রোহিঙ্গা এসেছে, যা দেশে থাকা ১২ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেখভালের জন্য সব তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে, যা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজতে আগামী কয়েক মাসে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে প্রথম সম্মেলন এই মাসের শেষের দিকে কক্সবাজারে হবে, যা বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নেওয়ার অষ্টম বার্ষিকীর সঙ্গে মিল রয়েছে। দ্বিতীয় উচ্চস্তরের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ সভার সময়, এবং তৃতীয়টি বছরের শেষের দিকে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত হবে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে অগ্রগতি সীমিত হয়েছে এবং ২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারে চলমান সশস্ত্র সংঘাত এটি আরও জটিল করেছে। দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট শুধু বাংলাদেশকেই প্রভাবিত করছে না; মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি আসিয়ান সদস্য দেশও এতে প্রভাবিত হয়েছে।
যদিও মালয়েশিয়া ১৯৫১ সালের জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রোটোকলের স্বাক্ষরকারী নয়, তবুও মানবিক কারণে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকটের সূচনা হয় ২০১৭ সালে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করার পর, যা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করে।