নভেম্বর ৪, ২০২৫, ০৯:২৩ এএম
						
                            
                                                        প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। একসময় যা ছিল শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশের পথে “দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পদক্ষেপ” হিসেবে প্রশংসিত, সেই পরিকল্পনাটিই এখন নীরবে গোপন করা হয়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশোধিত এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫ থেকে “সহকারী শিক্ষক (সংগীত)” ও “সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা)” পদ দুটি বাদ দেয়।
গত ২৮ আগস্ট প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি বিশেষায়িত শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল—যার অর্ধেক সংগীতে ও অর্ধেক শারীরিক শিক্ষায়। উদ্দেশ্য ছিল একাডেমিক পাঠের পাশাপাশি সৃজনশীলতা ও শারীরিক বিকাশে গুরুত্ব দেওয়া।
তবে ঘোষণার পরপরই হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি ইসলামী দল ও আলেমদের সংগঠন উদ্যোগটিকে “ইসলামবিরোধী” আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি জানায়। হেফাজত হুমকি দেয়, সংগীত শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে তারা আন্দোলনে নামবে।
অন্যদিকে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)সহ সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ নীতিকে সংবিধানসম্মত ও জাতীয় উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করে। তারা সতর্ক করে দেয়, সংগীতকে অনৈতিকতার সঙ্গে তুলনা করা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি অবমাননা।
সবশেষে মন্ত্রণালয় নীরবে পিছু হটে। ২ নভেম্বরের সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই পদ দুটি বাদ দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, এটি “প্রশাসনিক সংশোধন।” তবে তারা ধর্মীয় চাপের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মীরা সিদ্ধান্তটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার জন্য এক বড় ধাক্কা বলে আখ্যা দিয়েছেন। “সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা কোনো বিলাসিতা নয়—এগুলো শিশুর সামগ্রিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য,” বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষাবিদ। “এই সিদ্ধান্ত ভুল বার্তা দেয়, আমরা কেমন ভবিষ্যৎ চাই তা নিয়ে।”