সাধারণত পারিবারিক ক্ষেত্রে ভাই-ভাই লড়াই চোখে পড়লেও এবার রাজনীতির ময়দানে এমন দৃশ্যের সাক্ষী হতে চলেছেন কুড়িগ্রামবাসী। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে সৃষ্টি হয়েছে এক ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
এই আসনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী—দুই দল থেকেই প্রার্থী হয়েছেন দুই ভাই। ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও আগ্রহের ঝড়।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।
এর মধ্যে কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী-চিলমারী) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন আজিজুর রহমান। অন্যদিকে, একই আসনে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাককে, যিনি আজিজুর রহমানের আপন ছোট ভাই।
দুই ভাইয়ের এই রাজনৈতিক মুখোমুখি অবস্থান এখন স্থানীয় চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭১১ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ৯ জন।
বৃহৎ এই ভোটারগোষ্ঠীর মন জয় করতেই এখন দুই ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ও জামায়াত—উভয় দলই এই আসনে ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। ফলে ভাই-ভাই লড়াই এই আসনকে জাতীয় রাজনীতিতেও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
স্থানীয় এক প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, ‘রৌমারী-চিলমারীর ইতিহাসে এমন দৃশ্য প্রথম। ভাইয়ের বিপরীতে ভাই—এটা নির্বাচনী মাঠে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন প্রশ্ন, কে এগিয়ে থাকবেন?’
স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে কৌতূহল এখন তুঙ্গে। কেউ বলছেন, এটা পরিবারের ভেতরেও রাজনৈতিক বিভাজনের প্রতিচ্ছবি। আবার কেউ মনে করছেন, দুই ভাই-ই জনপ্রিয়; শেষ হাসি কে হাসবে তা বলা কঠিন।
জামায়াতের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, ‘আমার বড় ভাই বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হয়েছেন। তিনি যদি চূড়ান্ত মনোনয়নও পান, তবুও আমাকে পরাজিত করতে পারবেন না। জামায়াতের জনপ্রিয়তা এখন অনেক বেড়েছে। দুই ভাই প্রার্থী হলেও নির্বাচনে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।’
অন্যদিকে, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আজিজুর রহমান বলেন, আমার ছোট ভাই একসময় বিএনপিতেই ছিল। আমার কারণে সে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরে জামায়াতে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছে। আমাকে মনোনয়ন না দিলে আমার পরিচয় ও পারিবারিক ইমেজের কারণে সে এককভাবে সুবিধা নিতে পারত। কিন্তু আমি প্রার্থী হওয়ায় সেই সুযোগ হারিয়েছে। জনগণ আমাকেই চায়, তাই আমি আশা করছি দল আমাকে চূড়ান্ত প্রার্থী করবে।’
স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের ফল নির্ভর করবে মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর—দলের সাংগঠনিক শক্তি, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা এবং প্রার্থীদের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা। ভাই-ভাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচনে রোমাঞ্চ যোগ করলেও শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে কে জয়ী হবেন, তা সময়ই বলে দেবে।