আসন্ন নির্বাচন আয়োজনে প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়ে শঙ্কা

ইউএনবি

নভেম্বর ১, ২০২৫, ০২:০১ পিএম

আসন্ন নির্বাচন আয়োজনে প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়ে শঙ্কা

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই হিসেবে আর মাত্র তিন মাস পরই অনুষ্ঠিত হতে পারে বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

আসছে ফ্রেবুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসন এখনো অগোছালো ও মনোবলহীন—এমন মত দিচ্ছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যোগ্য ও সাহসী কর্মকর্তাদের নিয়োগ এবং নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা দিলে এখনো ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বারবার জানিয়ে আসছে, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন ভোট আয়োজনের দায়িত্বে থাকলেও মাঠ পর্যায়ে এর সফলতা অনেকটাই নির্ভর করে প্রশাসনের ওপর।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—বর্তমান প্রশাসন কি আদৌ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রস্তুত।

গত ১৫ মাসে প্রশাসন এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। নানা বদলি, পদোন্নতি ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা ও আস্থার সংকট। নিরপেক্ষভাবে কাজ করলে ভবিষ্যতে শাস্তি পেতে হতে পারে এই আশঙ্কায় কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা ও ভয়।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে এখনো প্রশাসন ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এজন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে যোগ্য, সাহসী ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল বাড়াতে হবে এবং নিরপেক্ষভাবে কাজের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞদের মতে, অগোছালো ও বিভক্ত প্রশাসনের মাঝেও এখনো সম্ভাবনা আছে। সাহসী পদক্ষেপ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে প্রশাসন ঘুরে দাঁড়ালে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘প্রশাসনের দুর্বলতা থাকলেও এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। সাহসী পদক্ষেপ নিলে ভালো নির্বাচন সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের সেই ক্রেডিবিলিটি নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভর করবে ডিসি-ইউএনওর মতো মাঠ প্রশাসনের ওপর—তাদের যোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও ঈমানের জোরের ওপর।’

সরকার যদি সত্যিই নিরপেক্ষতার বার্তা দেয় এবং মাঠ প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ দেয়, তাহলে এখনো ভালো নির্বাচন সম্ভব বলে মত দেন সাবেক এই সচিব।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া ইউএনবিকে বলেন, ‘২০০৮ সালের মানের নির্বাচন করার মতো সক্ষমতাও বর্তমান প্রশাসনের নেই। তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনা জরুরি। কর্মকর্তাদের মধ্যে ভয় কাটাতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’

রাজনীতিবিদরা না চাইলে প্রশাসন একা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী টাউটদের নিয়ন্ত্রণ করাও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি।

রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ

বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিএনপির অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়াত অনুগত কর্মকর্তাদের বসানো হচ্ছে। অন্যদিকে, জামায়াত দাবি করেছে, প্রশাসনের ৭০-৮০ ভাগ কর্মকর্তা একটি বিশেষ দলের প্রভাবাধীন।

বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান বলেন, ‘দেশজুড়ে ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রায় ১০ লাখ জনবল প্রয়োজন। এই বিশাল কাঠামো সরকারের প্রশাসনের সহায়তায় আসে। প্রশ্ন হলো—তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে কি না?’

সরকারের অবস্থান ও সাম্প্রতিক পদক্ষেপ

সরকার বলছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই তাদের অঙ্গীকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে প্রশাসনের সকল বদলি ও পদায়ন আমার তত্ত্বাবধানে হবে। যোগ্য কর্মকর্তাদের বাছাই করেই জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত সিনিয়র সচিব এহছানুল হক ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাদের নির্দেশ হলো—এটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব নিচ্ছি যাতে মাঠ প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে।’

Link copied!