কর্মজীবী নারীদের জন্য বিএনপির পরিকল্পনা জানালেন তারেক রহমান

বাসস

অক্টোবর ৩০, ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম

কর্মজীবী নারীদের জন্য বিএনপির পরিকল্পনা জানালেন তারেক রহমান

দেশের কর্মজীবী মা ও নারীদের নিয়ে দলের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেছেন, বিএনপি সারাদেশে এমন একটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে, যাতে শিশু পরিচর্যা (চাইল্ডকেয়ার) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কৌশলের অংশ হয়।

আজ (বৃহস্পতিবার) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।

পোস্টে তারেক রহমান বলেন, যখন কোনো তরুণ মা পর্যাপ্ত শিশু পরিচর্যার সুযোগ না পেয়ে চাকরি ছেড়ে দেন, অথবা কোনো ছাত্রী পড়াশোনা বন্ধ করে দেন, তখন বাংলাদেশ সম্ভাবনা, উৎপাদনশীলতা ও অগ্রগতি হারায়।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির লক্ষ্য আধুনিক ও গণমুখী দেশ গড়া। যাতে কোনো নারীকে তার পরিবার ও ভবিষ্যতের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে না হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, পুরুষদের তুলনায় নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। মোট পুরুষের ৮০ শতাংশের বিপরীতে মোট নারীর মাত্র ৪৩ শতাংশ কর্মজীবী। এই ব্যবধানই সতর্ক করছে যে, জাতির অর্ধেকেরও বেশি মেধা ও দক্ষতাকে আমরা পিছনে ফেলে যাচ্ছি। 

দলের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, ক) সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন; খ) সরকারি অফিসগুলোতে ধাপে ধাপে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ; গ) বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বাধ্যতামূলক ডে-কেয়ার ব্যবস্থা; ঘ) যেসব নিয়োগকর্তা শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা রাখবে তাদের জন্য কর সুবিধা ও সিএসআর ক্রেডিট প্রদান; এবং ঙ) নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মান অনুযায়ী কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রদান।

তারেক রহমান মনে করেন, এই সংস্কার নারীদের কর্মসংস্থান ও পারিবারিক আয় বৃদ্ধিতে, ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আর্থিক স্থিতিশীলতা দিতে এবং জিডিপিতে ১ শতাংশ পর্যন্ত যোগ করতে পারে।

তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শ্রমিকদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী, তাই কর্মজীবী মায়েদের অবদানকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গবেষণায় দেখা যায়, যেসব কারখানায় শিশু পরিচর্যার সুবিধা রয়েছে সেখানে কর্মী ধরে রাখার হার বেশি, অনুপস্থিতি কম, এবং প্রতিষ্ঠানগুলো এক বছরের মধ্যেই খরচ তুলে আনতে পারছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, শিশু পরিচর্যা কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য নয়, এটি সামাজিক-অর্থনৈতিক অবকাঠামোর অপরিহার্য অংশ। সড়ক যেমন বাজারকে সংযুক্ত করে, তেমনি ডে-কেয়ার সেন্টার নারীদের কর্মজীবনে সাফল্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

তিনি বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট: ২০৩৪ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি গড়ে তোলা, যেটি লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। সেখানে প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে নারীরা গর্বের সঙ্গে দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারবে।

তারেক রহমান বলেন, নারীর সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে এমন যে কোন পশ্চাৎমুখী ধারণাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি। শিশু পরিচর্যা, সমান মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন শুধু ন্যায়সংগত নয়; এটিই বুদ্ধিবৃত্তিক অর্থনীতি। 

প্রতিটি কর্মজীবী মা ও ছাত্রী নিজের সাফল্যের স্বাধীনতা পায় এবং সমাজের যত্ন ও সহযোগিতাকে অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়-এমন বাংলাদেশ গড়তে সবার প্রতি আহবান জানিয়েছে তিনি।

Link copied!