নভেম্বর ১, ২০২৫, ০৩:০১ পিএম
২০২৫ সালের অক্টোবর মাস ডেঙ্গুর জন্য সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ মাস হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। এই মাসে ৮০ জনের মৃত্যু এবং সর্বোচ্চ আক্রান্তের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর তথ্য অনুযায়ী, শুধু অক্টোবরেই ২,২৫০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে— যা চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এটি আবারও প্রমাণ করে যে, ডেঙ্গু বাংলাদেশে এক গুরুতর ও পুনরাবৃত্তি হওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
তুলনামূলকভাবে, সেপ্টেম্বরে ৭৬ জন, জুলাইয়ে ৪১ জন এবং আগস্টে ৩৯ জন ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ২৭৮ জনে।
এদিকে, শুক্রবারের ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৫০৬ জন রোগী শনাক্ত হওয়ায় এ বছর এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৯,৮৬২ জনে পৌঁছেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মো. আবু জাফর ৯ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, “এই বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেশি, কিন্তু মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম।”
গত বছর দেশে ৫৭৫ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছিল। তবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু মৌসুম ছিল ২০২৩ সালে, যখন ১,৭০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন।
চলতি বছরের মৃত্যু বিভাগ ও সিটি করপোরেশন অনুযায়ী:
ঢাকা দক্ষিণ: ১৩৪ জন
ঢাকা উত্তর: ৪১ জন
বরিশাল: ৪০ জন
চট্টগ্রাম: ২৫ জন
ময়মনসিংহ: ১২ জন
খুলনা: ৮ জন
ঢাকা বিভাগের (সিটি করপোরেশন ছাড়া): ৩ জন
সিলেট: ১ জন
আক্রান্তের দিক থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রথম স্থানে, সেখানে ১৭,২২৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরপর আছে ঢাকা বিভাগ (সিটি এলাকার বাইরে) ১১,৫৪৮, চট্টগ্রাম ১০,০৯২, ঢাকা দক্ষিণ ১০,১৯২, ঢাকা উত্তর ৯,১১২, রাজশাহী ৪,২৯৮, খুলনা ৩,৫৪৩, ময়মনসিংহ ২,২০৩, রংপুর ৭৯৪ এবং সিলেট ২৩৯।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু এখন বাংলাদেশে এন্ডেমিক রোগে পরিণত হয়েছে। এর মূল কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। অনিয়মিত বৃষ্টি, দীর্ঘ বর্ষাকাল, জলাবদ্ধতা এবং উষ্ণ আবহাওয়া মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে।
তারা আরও সতর্ক করছেন, ফগিং এবং লার্ভিসাইড ব্যবহার যেমন পূর্বে কার্যকর ছিল, এখন আর যথেষ্ট নয়। মশার আচরণ ও প্রজনন প্যাটার্ন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা জোরদার করতে হবে, যাতে বোঝা যায় জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে Aedes মশার জীবনচক্রে প্রভাব ফেলছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ কৌশল তৈরি করা সম্ভব হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে ডেঙ্গু সারা বছরই হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে, যা দেশের স্বাস্থ্য খাতে বড় চাপ তৈরি করবে।