সারাদেশে ১৬ প্রার্থীকে ইসির শোকজ, লোক দেখানো বললেন বিশ্লেষকরা

অভিশ্রুতি শাস্ত্রী

নভেম্বর ৩০, ২০২৩, ০২:৩৭ পিএম

সারাদেশে ১৬ প্রার্থীকে ইসির শোকজ, লোক দেখানো বললেন বিশ্লেষকরা

ইসির শোকজে প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার নজির নেই বলে জানায় বিশ্লেষকরা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে সারাদেশে ১৬ জন প্রার্থীকে কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ) দেয় নির্বাচন কমিশন। এদের অনেককেই সশরীরে উপস্থিত হয়ে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন বর্তমান মন্ত্রী রয়েছে। তবে প্রথমবারের মত শোকজ দিলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির কোন বিধান না থাকায় এটাকে লোক দেখানো বলে অভিমত দিয়েছে নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

গাড়িবহর ব্যবহার করে প্রচারণায় শোকজ বেশি

মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে শোকজ দেয়া হয়েছে গাড়িবহর ব্যবহার করে প্রচারণা ও জনভোগান্তি সৃষ্টির জন্য। ঠিক একই কারনে শোকজ করা হয়েছে ফরিদপুর ৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনকে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা এর মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না।

যাদেরকে শোকজ দেয়া হয়েছে

মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে শোকজ দেয়া হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীকে শোকজ দেয়া হয়েছে। মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীদের মিছিল করার পাশাপাশি প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করায় এই শোকজ দেয়া হয়। এদিকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মিছিলের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায়  জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সংসদ সদস্য ঢাকা-৬ আসনের কাজী ফিরোজ রশীদকে শোকজন দেয়া হয়।

গাজীপুর ২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে শোকজ দেয়া হয়েছে। এদিকে ফরিদপুর ৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, ঢাকা ১৯ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, গাজীপুর ৫ আসনে নারী ও শিশু প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, মুন্সীগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস, লক্ষীপুর ২ আসনে সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, লক্ষীপুর ৩ আসনে সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিঙ্কু, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী পীর ফজলুর রহমান মিসবাহকেও শোকজ করেছে ইসি।

সাংবাদিকের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ এসেছে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মোস্তাফিজ সমর্থকদের কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে শোকজ করেছে ইসি। এছাড়া নরসিংদী ৫ আসনের সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু , লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু ও লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-সদর আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নকে শোকজ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া চুয়াডাঙ্গা-১ আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল যোগে মিছিল এবং শোডাউন করায় এ নোটিশ দেন নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ-১ম মো. সাজ্জাদুর রহমান। আগামী ৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্য তাকে স্বশরীরে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালি-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিব্বুর রহমানকে আচারণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগে শোকজ করেছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি।

তবে প্রথমবারের মতো শোকজে সাজা দেওয়া হয় না নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। তবে দ্বিতীয়বার পোস্টার ও লিফলেট প্রচারণায় বিধি নিষেধ দিতে পারে। তখন তার প্রার্থীতা বাতিল করার এখতিয়ার রাখে কমিশন। তবে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

শোকজ কি তাহলে লোকদেখানো?

তবে ইসির শোকজে প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার নজির নেই বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা কম বলে জানায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)–এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানায়, শোকজের বিধিমালা অনুযায়ী ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রে বা বিরোধী দলীয় কোনো নেতার প্রার্থীতা বাতিল হয়েছে বলে আমার মনে হয় না ,এটা তো নতুন নির্বাচন। কি হবে না হবে সবকিছু এই নির্বাচনে সবকিছু ছক বাধা।

বদিউল আলম আরও বলেন, শাহজাহান আলম আসামি,যিনি প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি দিয়েছিলো এবং ধানমন্ডি থানায় তার নামে নাশকতার মামলা হয়েছে । কিন্তু সে আগামীকাল জামিন পেয়েছেন এবং নির্বাচনে দাড়িয়েছে আওয়ামীলীগের পক্ষে। সবকিছুই সম্ভব।

গতবার যারা শোকজ নোটিশ পেয়েছিলেন দশম কিংবা একাদশে এবার দ্বাদশ নির্বাচনে তাদের শোকজ একসঙ্গে ধরা হবে কি না জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার জানান, আমার মনে হয় না এ ধরনের কিছু হবে । সেক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের কোনো প্রার্থী যদি থাকেন তাদের ক্ষেত্রে জরিমানা হতে পারে বিশ হাজার থেকে এক লাখ। এগুলো তো লোক দেখানো । প্রার্থীতা বাতিল কারও হয়নি , বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশন লাগে। ক্ষমতাসীন বা বিরোধীদলীয় কারো ক্ষেত্রেই আসলে প্রার্থীতা বাতিল হয়নি ,অন্তত আমার নজরে তো আসেনি ।

প্রার্থীতা বাতিলের ক্ষমতা তো নিবার্চন কমিশন রাখে তবে , নির্বাচন কমিশন নিজেই এই ক্ষমতা বিলুপ্ত করার চেষ্টা করেছে । এই ক্ষমতার ব্যবহার হয়নি । এখন তো আর কোনোভাবেই সম্ভাবনা নাই।

যা আছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালায়

জাতীয় সংসদ আচরণ বিধিমালায় বেশ কিছু ধারা রয়েছে যেগুলো ভঙ্গ করলে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় ৩ ধারায় বলা হয়েছে কোন প্রতিষ্ঠানে চাঁদা,অনুদান দেয়া নিষিদ্ধ। ৩ (ক) ধারা অনুসারে নির্বাচন পূর্ব সময়ে প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন ইত্যাদি করলে। এছাড়া সার্কিট হাউস কিংবা ডাক বাংলো ব্যবহার করলে, নির্বাচনী প্রচারণা তিন সপ্তাহ আগে করলে কারণ দর্শাতে বলতে পারে নির্বাচন কমিশন। 

অনুমতি না নিয়ে সভা সমিতি করলে কিংবা অন্যের সভায় হস্তক্ষেপের পাশাপাশি জনসাধারণের অসুবিধা হয় সে ধরনের কিছু করা যাবে না। বৈদ্যুতিক খুঁটি,বাস,সরকারি স্থাপনায় পোস্টার কিংবা লিফলেট লাগালে। বাস,ট্রাকসহ কোন যানবাহনের মাধ্যমে মিছিল,মশাল মিছিল কিংবা শোডাউন করা যাবে না। এদিকে দেওয়ালে লিখন ও কোন জীবন্ত প্রাণী প্রচারণায় ব্যবহার করা।

গেইট,তোরণ ও প্যান্ডেল নির্মাণ করলে। অন্য কারও প্রচারণায় বাধা প্রদান করলে। উচ্ছৃংখল বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদানের পাশাপাশি দুপুর ২ টার আগে ও রাত ৮ টার পর মাইক ব্যবহার ও প্রচারণায় সরকারি কর্মকর্তাকে ব্যবহার করলে শোকজ দিতে পারে নির্বাচন কমিশন।

Link copied!