ডিসেম্বর ২৩, ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। | ছবি : পিআইডি
দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা শক্তিশালী করা, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পরিশোধিত জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে বড় উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ লক্ষ্যে ‘ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আওতাভুক্ত এই প্রকল্পটি চট্টগ্রাম জেলার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পতেঙ্গা এলাকায় বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৬৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে ২১ হাজার ২৭৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা সরকারি ঋণ হিসেবে আসবে এবং ১৪ হাজার ১৮৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ইআরএলের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে নভেম্বর ২০৩০ পর্যন্ত।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটির প্রধান লক্ষ্য হলো জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা আরও সুসংহত করা, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন এবং পরিশোধিত জ্বালানি আমদানির ওপর দেশের উচ্চ নির্ভরতা হ্রাস করা।
প্রকল্পের আওতায় সাইট প্রস্তুতি, বিস্তারিত প্রকৌশল নকশা, ক্রয় ও নির্মাণসহ সিভিল ও মেকানিক্যাল কাজের বাস্তবায়ন করা হবে। সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ২০টি প্রসেসিং ইউনিট এবং ১৮টি ইউটিলিটি ও অফ-সাইট ইউনিট স্থাপন করা হবে।
এছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) থেকে গ্যাস সংযোগ, ড্রেনেজ অবকাঠামো নির্মাণ এবং কম্পিউটার, অফিস সরঞ্জামসহ অন্যান্য সহায়ক সামগ্রী সংগ্রহ করা হবে।
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের বর্তমান অপরিশোধিত তেল পরিশোধন সক্ষমতা বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে ইআরএল দেশের মোট পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ পূরণ করতে পারে, বাকি চাহিদা আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়। ফলে পরিশোধিত জ্বালানি আমদানিতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা আরও জানান, ইউরো-৫ জ্বালানি মানদণ্ড চালুর ফলে পেট্রোলিয়াম পণ্যের মানসংক্রান্ত শর্ত আরও কঠোর হয়েছে। প্রস্তাবিত আধুনিকায়িত রিফাইনারিতে ইউরো-৫ মানের পরিবেশবান্ধব গ্যাসোলিন ও ডিজেল উৎপাদন করা হবে এবং ইআরএলে বর্তমানে উৎপাদিত ডিজেল, মোটর স্পিরিট ও অকটেনকে ইউরো-৫ মানে উন্নীত করা হবে।
এরই মধ্যে বিপিসি ‘ডাবল পাইপলাইনসহ সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) স্থাপন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যার মাধ্যমে বছরে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল পরিবহন সম্ভব হবে। এতে সম্প্রসারিত রিফাইনারির জন্য প্রয়োজনীয় বড় পরিমাণ অপরিশোধিত তেল পরিচালনার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে বিপিসি বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধন সক্ষমতা নিয়ে ইআরএল আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণ, পরিশোধিত জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানো, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশে অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের মাধ্যমে তুলনামূলক কম খরচে জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন সম্ভব হবে এবং জাতীয় চাহিদার প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ করা যাবে। এর ফলে জ্বালানি মজুত সক্ষমতা বাড়বে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।