বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক অনেকটা আকস্মিকভাবেই বলেছেন যে, ত্রিপুরার আগরতলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে প্রবাসী সরকারের ঘোষণা দিতে দিতে যাচ্ছে। এই তথ্য সামনে আসার পর, শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেমন এ নিয়ে কথা বলছেন, তেমনি আলোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিরোধী মহলেও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আদৌ কি আওয়ামী লীগ প্রবাসী সরকার গঠন করতে যাচ্ছে? তারা কি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়ের মতো ভারতের মাটিতে বসে আরেকটি সরকারের ঘোষণা দেবে?
আগরতলায় প্রবাসী সরকারের আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল হান্নান। শনিবার নোয়াখালীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, কুমিল্লার একটি অংশে নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনী অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতারা মিটিং করার জন্য একত্র হচ্ছেন এবং ভারতের আগরতলায় তাঁরা একটি সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই সমাবেশ থেকে তাঁরা একটি প্রবাসী সরকারের ঘোষণা দিতে চায় এবং শেখ হাসিনা সেখানে নিজে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখতে পারেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
শুধু আবদুল হান্নানই নন, একইদিনে কুমিল্লার একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রবাসী সরকার গঠন নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনিও বলেছেন, তারা এরই মধ্যে আমরা খবর পেয়েছেন যে, কুমিল্লার পার্শ্ববর্তী সীমান্ত ত্রিপুরায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জমায়েত হওয়ার অপচেষ্টা করছেন। তবে এ প্রচেষ্টা সফল হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
কিন্তু এই দুই সমন্বয়কের বক্তব্যের পর প্রবাসী সরকার গঠনের আলোচনা ব্যাপকভাবে সামনে চলে এসেছে। যদিও আওয়ামী লীগের নেতাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের সম্ভাবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থান করা আওয়ামী লীগের দুইজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক বাংলা সংবাদমাধ্যম এনওয়াইবাংলা লাইফ। প্রবাসী সরকার গঠনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তারা বলেছেন, শেখ হাসিনা তো পদত্যাগ করে যাননি। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি একটু গুছিয়ে যা করার তাই করবেন তিনি।
আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, প্রবাসী সরকার গঠন করা হলে তো আমরা জানতাম। এই ধরনের কোনো কিছুই আমাদেরকে বলা হয়নি।
তাহলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- এই প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, আপাতত চুপচাপ থাকতে বলা হয়েছে। কোনো কিছুই এখন করা যাবে না।
প্রবাসী সরকার গঠন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিলো আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিমকে। বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তো পদত্যাগ করেননি। একটি মহল বহু চেষ্টা করেছে বলার জন্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তারা কিন্তু এর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই দুই নেতাকেই এনওয়াইবাংলা লাইফ জিজ্ঞেস করেছিলো- আপনারা কি ত্রিপুরায় আছেন? জবাবে দুইজনই জানিয়েছেন, তারা কলকাতায় অবস্থান করছেন।
প্রতিবেদনটি পড়ুন: আসলেই কি প্রবাসী সরকারের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ?
ব্যাপক প্রাণঘাতি আন্দোলনের মুখে গত পাঁচ আগস্ট ভারত গিয়ে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন বলে গণমাধ্যমগুলোর সংবাদে জানা গেছে। ভারত সরকারও নিশ্চিত করেছে যে, শেখ হাসিনা তারা আশ্রয়ে রেখেছেন। পাঁচ আগস্ট দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ঘোষণা দেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার অবস্থান নিশ্চিত করলো ভারত
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর শেখ হাসিনার নামে অনেকগুলো মামলা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। তার বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ভারতেই আছেন এবং থাকবেন। অর্থাৎ বিচারের জন্য তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না, এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে ভারত।