সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪, ০৯:৩৬ এএম
কিশোরগঞ্জ, ফেনী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বের করা মিছিলে হামলার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার এই হামলায় এখন পর্যন্ত একজন নিহত এবং কমপক্ষে ৬০ জন আহত হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বের করা মিছিল থেকে একটি মাজারে হামলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় অন্তত ২০ জন আহত হন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে ঈদে মিলাদুন্নবীর মিছিলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
ফেনীর দাগনভূঞায় মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসের মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সোমবার আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত বিজয়নগর উপজেলা শাখার আয়োজনে দৌলতবাড়ি দরবার শরিফের ব্যবস্থাপনায় উপজেলার চম্পকনগর মোড় থেকে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালী বের হওয়ার আগে কিছু কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক জশনে জুলুস প্রতিহতের নামে বাধা দিলে এ বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
এ সময় মিছিলে অংশগ্রহণকারী কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তারা। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এনিয়ে উপজেলাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
দৌলতবাড়ি দরবার শরিফের পির শাহ্ সূফী সৈয়দ নাঈম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইসলাম শান্তি প্রিয় একটি ধর্ম। যে ধর্ম সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। সেই ধর্মের নামে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা করে তারা কখনো ধর্মের কল্যাণকামী হতে পারে না। আজকে যারা পবিত্র ঈদে ঈদে মিলাদুন্নবীর জুশনে জুলুসে বাধা দিয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তারা শান্তি বিনষ্টকারী। এই উশৃঙ্খল গোষ্ঠিকে শক্ত হাতে প্রতিহত করতে হবে।
তিনি প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করে আরো বলেন, এই ঘটনার বিচার না করলে শান্তিপ্রিয় সুন্নী জনতা তার মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে। তাই আশা করব প্রশাসন সুন্নী জনতার উপর আক্রমণকারী দোষীদের বিচার করবে।
বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালি নিয়ে যাওয়ার পথে চম্পকনগর মাদ্রাসা মোড় অতিক্রম করার সময় হেফাজত ইসলামের কিছু লোক হঠাৎ র্যালির একজনকে হামলা করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বের করা মিছিল থেকে একটি মাজারে হামলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় অন্তত ২০ জন আহত হন।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়নের ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং মাজারপন্থিদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গেছে। নিহত যুবকের নাম মিলন মিয়া (৩৪)। তিনি পূর্ব ছয়সূতি গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে সকালে জশনে জুলুসের মিছিল বের করেন স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছয়সূতি ইউনিয়নের ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মিছিলটি গেলে কয়েকজন ব্যক্তি একটি মাজারে হামলার চেষ্টা করে। এ নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাজারপন্থিদের সংঘর্ষ হয়। সেইসঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন ওই এলাকার একটি মসজিদ ও মাজারে ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার জাহান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মাজারে হামলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে এক যুবক নিহত এবং অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।’
ফেনীর দাগনভূঞায় মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসের মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ হামলার অভিযোগ উঠেছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জামায়াতের নেতারা।
সোমবার সকাল ৯টার দিকে দাগনভূঞার হজরত মাইজ্জা হুজুর (রহ.)-এর মাজার ও কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন কমিটির নেতা আবু নাসের ও অলি আহমদ এ হামলার পেছনে স্থানীয় জামায়াত শিবিরকে দায়ী করেন।
তারা অভিযোগ করেন, ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে হজরত মাইজ্জা হুজুর (রহ.) এর মাজার শরিফে জশনে জুলুসে যোগ দেওয়ার জন্য সকাল থেকে মিছিল নিয়ে মানুষজন আসতে শুরু করেন। এ রকম একটি মিছিলে অতর্কিত হামলা করেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এতে মুসল্লিরা দ্বিগ্বিদিক ছোটাছুটি করেন। এ সময় অনন্ত ২০ জন আহন হন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। ঘটনাস্থলে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিবেদিতা চাকমা।
জশনে জুলুস উদযাপন কমিটির নেতা মাওলানা হাসনাইন আহমদ আল কাদেরী ও মাওলানা নুর হোসাইন আল হাসানী সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের সুন্নি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে এবং অনেকের মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেন।’
তবে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে উপজেলা জামায়াতের আমির সালাহ উদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে হামলার ঘটনা ঘটলে আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে এনেছি। পরিকল্পিত হামলার অভিযোগ মিথ্যা।
দাগনভূঞা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাসেল মিয়া বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।