দুর্নীতির অভিযোগে দেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে যারপরনাই বিস্মিত হয়েছেন তিনি।
তারা যদি ব্যক্তি আজিজকে টার্গেট করে থাকে, ভেরি আনফরচুনেট। বিশ্বের ১ নম্বর দেশ! তাও একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা! অবসরে যাওয়ার ৩ বছর পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনও রাজনীতিতে নাই, কোনও কিছুতেই নেই। এমন একজনকে নিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্তে আমি বিস্মিত ও অবাক হয়েছি
- জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান
মঙ্গলবার (২১ মে) দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গ উঠলে বিস্ময় বোধ করেন তিনি। সাবেক এই সেনা প্রধান বলেন, “চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার ৩ বছর পর বিশ্বের ১ নম্বর একটা দেশের এমন সিদ্ধান্ত সত্যিই অবাক করা বিষয়। আমি বিস্মিত হয়েছি, আমি অবাক হয়েছি। এসব নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তো কোনও লাভ নাই। এর কোনও ফলও নেই। সবাইকে জানানোটাই হচ্ছে কথা। আর আমিও তো কাউকে বলিনি যে কথা বলবো না।”
জেনারেল আজিজ বলেন, “তারা যে দুটি অভিযোগ দিয়েছে, ইট ইজ নাথিং নিউ। নতুন কিছু নয়। আল জাজিরায় অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান। সেখানে যা ছিল, এই দুটি অভিযোগ কিন্তু ওখানে ছিল। বরং তারা (আল জাজিরা) আরও মশলা দিয়ে আরও প্রচার করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এরা এখানে কোনও নাম মেনশন করেনি। সংক্ষেপে দুটো কথা লিখেছে। অনেকটা আল জাজিরাকে কপি করা হয়েছে। এখন আমার বক্তব্য হচ্ছে, কোনওটাই সত্য নয়।”
আরও পড়ুন: সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
তিনি আরও বলেন, “আমি চার বছর ডিজি, বিজিবি ছিলাম। ৩ বছর সেনাপ্রধান ছিলাম। কেউ বলতে পারবে না আমি আমার কোনও ভাইকে একটা কন্ট্র্যাক্ট দিয়েছি। এটা তো প্রশ্নই আসে না যে আমার ভাইকে মিলিটারি পারচেজের (কেনাকাটা) কন্ট্র্যাক্ট দিয়ে আমি ঘুষ নিয়েছি ভাইয়ের মাধ্যমে। এগুলো ডাহা মিথ্যা কথা। আমি আমার কোনও ভাইকে কন্ট্র্যাক্ট দিইনি। এটা আমি সব মিডিয়াকে বলেছি। মিলিটারি কন্ট্র্যাক্টের কথা যেটা ওরা বলছে, সেটা হচ্ছে- আল জাজিরায় তারা যেটা বলছিল আরও কিছু রং মাখিয়ে তাকেই কাকতালীয়ভাবে মেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সাবেক সেনা প্রধান বলেন, “আমার ভাই ২০০২ সাল থেকে দেশের বাইরে। ভ্যালিড ডকুমেন্ট নিয়ে তিনি দেশের বাইরে গেছেন। দেশ থেকে চলে যাওয়ার জন্য আমি তাকে সহযোগিতা করেছি আমার অফিসিয়াল ক্যাপাসিটিতে, দেশের প্রচলিত প্রথাকে উপেক্ষা করে এসব ভক্কর চক্কর করেছি, এর কোনও যুক্তি আছে বলে আমি মনে করি না।”
জেনারেল আজিজের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তার দিক থেকে কিছু করণীয় আছে কিনা। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার করণীয় কী আর হবে! অনেক সাংবাদিক ভাই এসেছিলেন, জানতে চেয়েছেন, বক্তব্য দিয়েছি। আমি আমার বক্তব্য সবাইকে জানিয়েছি। এটাই করণীয়। তারা যদি ব্যক্তি আজিজকে টার্গেট করে থাকে, ভেরি আনফরচুনেট। বিশ্বের ১ নম্বর দেশ! তাও একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা! অবসরে যাওয়ার ৩ বছর পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনও রাজনীতিতে নাই, কোনও কিছুতেই নেই। এমন একজনকে নিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্তে আমি বিস্মিত ও অবাক হয়েছি। এটা হচ্ছে এক ধরনের কথা। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, এসব নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তো লাভ নাই। এটার কোনও ফলাফল নাই। এইযে সবাইকে জানানো, এটাই হচ্ছে কথা। আর আমিও তো কাউকে বলিনি যে কথা বলবো না।”
এই নিষেধাজ্ঞার পেছনের উদ্দেশ্যটা কী জানতে চাইলে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, “আমি রাজনীতিবিদও নই। কোনও অ্যানালিস্টও নই যে এনালাইসিস করে বলবো। আমি রিটায়ার্ড পারসন। বাট ভেরি আনফরচুনেটলি এটা করা হয়েছে।”
সরকারকে হেয় করার জন্য কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হতেও পারে। যেহেতু আমি এখন কোথাও নাই। সেজন্য অন্য কাউকে এটাতে যুক্ত করতে চাচ্ছি না। এটা সবাই বুঝতে পারবে। সচেতন যে কেউ বুঝতে পারবে কাকে টার্গেট করে কী জন্য এটা করা হয়েছে।”
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, দেশের সাবেক সেনা প্রধানকে ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্রের অবনতি’ ও ‘দুর্নীতি’তে জড়িত থাকার কারণ দেখিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, নিজের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আজিজ আহমেদ সামরিক বাহিনীর ঠিকাদারি তার ভাইকে পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ও অপরাধ সত্ত্বেও নিজের ভাইদের বাঁচাতে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।