জুলাই ২৮, ২০২৫, ১২:৪৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কটূক্তির অভিযোগে রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে এক কিশোরকে (১৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার রাতে গঙ্গাচড়া থানা-পুলিশ আটকের পর রোববার তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
কটূক্তির জেরে রোববার বিকেলে গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লিতে অভিযুক্ত কিশোরের বাড়িসহ অন্তত ১৫টি বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রোববার বিকেলেই মাঠে নামে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এলাকায় টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া কিশোর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশনের শিক্ষার্থী। ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। পরদিন রোববার সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে আদালতের নির্দেশে তাকে সম্মিলিত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধর্মীয় কটূক্তির জেরে শনিবার সন্ধ্যার দিকে পুলিশ ওই কিশোরকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর পাশের এলাকার একদল লোক হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় গ্রামের লোকজন ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে ওই যুবকের বাড়ি মনে করে বিক্ষুব্ধ লোকজন অন্য একজনের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান।
পরে রোববার বেলা ৩টার দিকে ওই হিন্দুপল্লির পাশের এলাকার লোকজন লাঠিসোঁটা হাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিঙ্গেরগাড়ি বাজারে এসে জমায়েত হন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে খিললগঞ্জ বাজার হয়ে বিকেল ৪টার দিকে আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লিতে এসে ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশ সদস্যরাও।
পুলিশ কর্মকর্তা আল এমরান বলেন, ‘শনিবার রাতেই উত্তেজিত জনতা কিশোরের বাড়ির সামনে জড়ো হয়। পরে দ্বিতীয় দফা মিছিলে একজনের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। রোববার জোহরের নামাজের পর বিক্ষুব্ধ জনতা ফের জড়ো হয়ে ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। গুরুতর আহত এক কনস্টেবলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৫০০ থেকে ৬০০ লোক হাতে লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ বাধা দিলে তাদের ওপর হামলা চালান মিছিলে অংশ নেওয়া লোকজন। পরে পুলিশ সরে গেলে প্রতিটি বাড়িতে ঢুকে ঢুকে তারা ভাঙচুর চালান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘ঘটনাটি গঙ্গাচড়া উপজেলার হলেও পাশের কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাংলাবাজার থেকে একটি মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়। পুলিশকে জানানো হয়েছিল, তারা ওই গ্রামে যাবে না। কিন্তু বেলা ৩টার দিকে স্লোগান দিতে দিতে তারা গ্রামে ঢুকে ভাঙচুর চালায়।’
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা রোববার সন্ধ্যায় খিলালগঞ্জ বাজারে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আমরা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কাজ করছি।’