বদলে যাচ্ছে রাষ্ট্রের মূলনীতি, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ১৫, ২০২৫, ০৪:২৯ পিএম

বদলে যাচ্ছে রাষ্ট্রের মূলনীতি, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে ক্ষমতা কাঠামো, সংসদের ধরনসহ বড় পরিবর্তনের প্রস্তাবনা রয়েছে।

রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র – এই পাঁচটি বিষয়কে সুপারিশ করা হয়। এর আগে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর বাহাত্তরে সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি ছিল: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই কমিশন গঠিত হয় অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে। তারা তিন মাস ধরে এক লাখ নাগরিক, রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন পক্ষের মতামত সংগ্রহ করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে ভারসাম্য আনার প্রস্তাব

ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রস্তাব করেছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা রয়েছে, যা ব্যক্তিতান্ত্রিক শাসনকেও উৎসাহিত করে।

প্রস্তাবনায় ক্ষমতা দুই ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ (আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ, ও বিচার বিভাগ) এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য আনার কথা বলা হয়েছে।

নির্বাহী প্রধানের একক সিদ্ধান্তের ক্ষমতা কমিয়ে তা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে ভাগ করে জাতীয় স্বার্থে নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে আসন সংখ্যা ৫০৫ করার প্রস্তাব

এছাড়া কমিশন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে আসন সংখ্যা ৫০৫ করার প্রস্তাব করেছে।, যেখানে নারীদের জন্য ১০০ আসনে সরাসরি ভোটের বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংসদে নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যা ৪০০ এবং উচ্চকক্ষে ১০৫ আসন রাখা হবে।

উচ্চকক্ষে সদস্য নির্ধারণে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হার অনুযায়ী আনুপাতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে, যাতে সংখ্যালঘু ও নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।

অধ্যাপক আলী রীয়াজের মতে, বর্তমান জনসংখ্যার আলোকে সংসদীয় এলাকার সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। দুই কক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রেখে জনগণের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ বাড়ানো হবে, যা গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।

৭০ অনুচ্ছেদ: সুরক্ষিত থাকবেন না প্রধানমন্ত্রী

৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না, যা তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করে। এ বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট সুপারিশ থাকছে। জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে অনুচ্ছেদটির ভূমিকা পুনর্বিবেচনার কথা বলা হয়েছে।

বিচার বিভাগ: বিকেন্দ্রীকরণ, প্রতি বিভাগে হাইকোর্টের মর্যাদার স্থায়ী আসন

এদিকে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের একক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বিভাগের মর্যাদা এবং এখতিয়ার সম্পন্ন একটি স্থায়ী আসন প্রবর্তনের সুপারিশও করেছে কমিশন।

স্থানীয় সরকার: স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা তাদের কার্যক্ষমতা সীমিত করছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার এবং তাদের জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণের পথ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে।

এর আগে রাষ্ট্র সংস্কারের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ নিয়ে দেশটির তদারকি সরকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন দেয় চারটি কমিশন। বুধবার সকালে নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন— এই চার সংস্কার কমিশন তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।

Link copied!