এপ্রিল ৬, ২০২৫, ০৫:৫৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনার ভাগ্নি, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে অসত্য তথ্য দিয়েছেন কি না, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে।
ঢাকার গুলশানের ওই অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশেও তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
৪২ বছর বয়সী টিউলিপ কোনো ধরনের অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন। ডেইলি মেইলকে তিনি বলেছেন, ২০০২ সালে বাবা-মায়ের কাছ থেকে ‘উপহার’ হিসেবে তিনি ওই ফ্ল্যাট পেয়েছিলেন। ২০১৫ সালের মে মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ‘বৈধভাবে’ তিনি ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর কাছে হস্তান্তর করেন।
২০১৫ সালের জুনে ওয়েস্টমিনস্টারে এমপিদের জমা দেওয়া সম্পদের হিসাবে বলা হয়েছিল, পরিবারের একজনের সঙ্গে যৌথভাবে ওই সম্পত্তির মালিকানায় আছেন টিউলিপ। পরের মাসেই ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তর করার কথা বলা হয়েছে সেখানে।
কিন্তু ডেইলি মেইল বলছে, গত সপ্তাহে ঢাকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনুসন্ধান চালিয়ে তারা ভিন্ন তথ্য পেয়েছে। সেখানে সংরক্ষিত নথি বলছে, টিউলিপ এখনো ওই ফ্ল্যাটের মালিক, যা দুদকের অভিযোগের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ।
গত ১০ মার্চ দুদকের তরফ থেকে বলা হয়, টিউলিপ তার বোনকে গুলশানের ওই ফ্ল্যাট হস্তান্তরে যে নোটারি ব্যবহার করেছেন, তদন্তে তা ‘ভুয়া’ প্রমাণিত হয়েছে।
টিউলিপ ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা রূপন্তীকে ‘হেবা’ করে দেন। হেবা দলিলটি হয় ২০১৫ সালের ৯ জুন। সেখানে দাতা ছিলেন রিজওয়ানা সিদ্দিক (টিউলিপ সিদ্দিক); গ্রহীতা ছিলেন আজমিনা সিদ্দিক।
দলিলে বলা হয়, ‘বোনের প্রতি ভালবাসা ও স্নেহ’ থেকে সম্পত্তি হেবা দিতে চান দাতা।
দলিল অনুযায়ী, ২৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় কেনা গুলশানের ফ্ল্যাটটি আজমিনা সিদ্দিককে দেওয়া হয়। দলিলে ফ্ল্যাটের সম্পূর্ণ মালিকানা, স্বত্ব, অধিকার এবং একটি পার্কিং স্পেস হস্তান্তরের কথা বলা রয়েছে।
দলিল অনুযায়ী ফ্ল্যাটের অবস্থান, গুলশান রেসিডেনশিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর প্লটে। এটি ভবনের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ-পূর্ব পাশের একটি ফ্ল্যাট। দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দলিল সম্পন্ন হয়।
সেই হেবা দলিলে সই রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের। প্লট মামলার অভিযোগ তদন্তে দুদক ওই আইনজীবীরও সাক্ষ্য নেয়।
দুদককে তিনি বলেছেন, তার নোটারির নামে টিউলিপের ফ্ল্যাট হস্তান্তরের যে হেবা দলিলটি দেখানো হয়েছে, সেখানে সিলটি তার মতই, কিন্তু সইটি ‘তার নয়’।
হেবা দলিলের এক সাক্ষীকে চিনলেও দাতাসহ অন্যদের চেনেননা বলে দুদকের কাছে দাবি করেছেন ওই আইনজীবী।
এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে সিরাজুল ইসলাম সে সময় বলেছিলেন, “ওই হেবা দলিলের নোটারি আমি করিনি। উনাদের কখনো ওই নামে চিনিও না। এমনিতে চিনি ওই নামে একজন ব্রিটিশ মন্ত্রী ছিলেন কিছুদিন আগে; ওতটুকুই।
“কিন্তু উনাদের আমি চিনি না। আর বিষয় হল, আমি আমার চেম্বারের বাইরে সাধারণত কোনো নোটারি করি না।”
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল লিখেছে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ফ্ল্যাট বা সম্পত্তির হস্তান্তর তখনই বৈধ হিসেবে গণ্য হয় যখন সেটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেকর্ড করা হয়।
দুদকের দাবি অনুযায়ী, হেবা দলিলটি ‘ভুয়া’ ছিল, কারণ যিনি এটি আইনগতভাবে অনুমোদন করেছেন বলে বলা হয়েছে, সেই আইনজীবী বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।
তবে ডেইলি মেইলের প্রশ্নে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী বলেছেন, যথাযথভাবেই হেবা সম্পন্ন করা হয়েছিল এবং টিউলিপ ‘পরিবারের সদস্যের সঙ্গে যৌথভাবে ফ্ল্যাটের মালিকানায় থাকার কথা’ ঘোষণাও করেছিলেন, যেহেতু ফ্ল্যাটের ভাড়া তার বোনই পেতেন।
টিউলিপের প্রতিনিধি দুদকের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক’ আখ্যায়িত করেছেন।
তার আইনজীবী পল থুয়েট মেইলকে বলেছেন, একজন বাংলাদেশি আইন বিশেষজ্ঞ তাকে জানিয়েছেন যে এক্ষেত্রে হেবা দলিলই যথেষ্ট। আর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের যে নথির কথা বলা হচ্ছে, তাও ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’। টিউলিপ সিদ্দিক পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেছেন—এমন দাবি ‘অসত্য ও অযৌক্তিক’।
শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ড দামের একটি ফ্ল্যাট ‘উপহার’ পাওয়ার খবর নিয়ে সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেন টিউলিপ সিদ্দিক।
গত আগস্টে গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর তার ভাগ্নির ‘উপহারের’ ফ্ল্যাট নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়।
টিউলিপ ২০২২ সালে ডেইলি মেইলের কাছে দাবি করেছিলেন, তার বাবা-মা ওই ফ্ল্যাট কিনে তাকে দিয়েছেন। তবে পরে স্যার লরি ম্যাগনাসের তদন্তে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক ‘অনিচ্ছাকৃতভাবে’ জনগণকে বিভ্রান্ত করেছিলেন।
গত সপ্তাহে এক এক্স পোস্টে টিউলিপ দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা দুদকের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’।
বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে ‘হয়রানিমূলক’ প্রচার চালানোরও অভিযোগ করেন তিনি।
টিউলিপ বলেন, “যুক্তরাজ্যে এজন্য একটি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। আইনের শাসন ও ন্যয় বিচারের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। আনন্দের সঙ্গে আমি তাদের যুক্তিসঙ্গত যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেব, কিন্তু কোনো নোংরা রাজনীতিতে টেনে নামানোর চেষ্টা হলেও তাতে জড়াব না।
“একই সঙ্গে একজন ব্রিটিশ নাগরিক এবং যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের গর্বিত সদস্য হিসেবে আমার কাজের মর্যাদা নষ্ট করে তাদের এমন দুষ্টু হয়রানিমূলক কিছু করার সুযোগ দেব না।”
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।