আর্থিক খাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে বিশ্বব্যাংকের প্রশংসা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১৫, ২০২৫, ১২:৪৭ পিএম

আর্থিক খাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে বিশ্বব্যাংকের প্রশংসা

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সদ্য নিযুক্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত আর্থিক খাতের সংস্কারমূলক কর্মসূচির জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করেছেন।

গতকাল সোমবার রাতে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জোহানেস জুট। এ সময় তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকালে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য নিযুক্ত ডিরেক্টর জ্যাঁ পেসমে উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসস।

জোহানেস জুট বাংলাদেশের প্রতি তার গভীর ভালোবাসার কথা জানান। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে তাঁর পূর্ববর্তী দায়িত্বকালের কথা স্মরণ করেন তিনি।

মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে জোহানেস জুট বলেন, ‘আপনি ও আপনার দুর্দান্ত টিম চমৎকার কাজ করছে। তার জন্য ধন্যবাদ জানাই।’

আর্থিক খাতে কিছু চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে জোহানেস জুট। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের যাত্রা চালিয়ে যেতে এবং বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।’

গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ হারানো শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জোহানেস জুট বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের জন্য এটি এক আবেগময় মুহূর্ত ছিল।

জোহানেস জুটের সমর্থন ও প্রশংসার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন দেশ ধ্বংসস্তূপের মতো ছিল, যেন তা ভূমিকম্পপরবর্তী ভয়াবহ পরিস্থিতি। আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তবুও সব উন্নয়ন সহযোগী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এটা আমাদের অনেক সহায়তা করেছে, আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকা তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তারা জাতিকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘গত জুলাইয়ে আমাদের তরুণেরা যা করেছে, তা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা ও নারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। আমরা আজ (১৪ জুলাই) জুলাই নারী দিবস পালন করছি। তাদের ত্যাগ যেন বৃথা না যায়। তরুণেরাই আমাদের দেশের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের তাদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।’

বিশ্বব্যাংক যেন বাংলাদেশকে শুধু ‘একটি ভৌগোলিক সীমানা’ হিসেবে না দেখে বৃহত্তর অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে, সেই আহ্বান জানান মুহাম্মদ ইউনূস।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হলে গোটা দক্ষিণ এশিয়া সমৃদ্ধ হবে। আমরা যদি নিজেদের আলাদা করি, তাহলে উন্নয়ন হবে না। আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসুবিধা ও পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। আমাদের একটি সমুদ্র আছে, যা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’

মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘অনেক দেশেই তরুণদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই আমরা তাদের বলেছি, তাদের কারখানাগুলো এখানে নিয়ে আসুক। আমরা শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করব, যেন বাংলাদেশ একটি উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে ওঠে।’

নারীর ক্ষমতায়নে মুহাম্মদ ইউনূসের কাজের প্রশংসা করেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট। তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাকে সমর্থন দিয়ে যাব। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশে মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প চালু হয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে অন্যান্য দেশেও অনুসরণ করা হয়েছে।’

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে তরুণদের জন্য সুযোগ তৈরিতে সহায়তা করবে বলে জানান জোহানেস জুট। তিনি উল্লেখ করেন, গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে। আগামী তিন বছরেও একই ধরনের সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরসংলগ্ন নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) সর্বশেষ তথ্য জানান। লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, এনসিটির নতুন পরিচালন ব্যবস্থার ফলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

লুৎফে সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা একে আরও কার্যকর করা। আমরা ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে নিট বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছি, যা ইন্ট্রা-কোম্পানি ঋণ ও শক্তিশালী ইকুইটি বিনিয়োগের মাধ্যমে হয়েছে।’

Link copied!