দেশের উত্তর-পশ্চিম ও সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। দেশ বিভাগের আগে এটি মালদহ জেলার অংশ ছিল। ১৯৮৪ সালে এ অঞ্চলটি একক জেলা হিসেবে গণ্য হয়। তখন জেলার নাম ছিল নবাবগঞ্জ। চম্পক থেকেই চাঁপাই। একসময় নবাবরা এ অঞ্চলে শিকারে আসতেন, সে সূত্রে নবাবগঞ্জ। এই দু’শব্দের সমন্বয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। পরে জেলাবাসীর দাবিতে সরকারিভাবে ২০০১ সালের পহেলা আগস্টে চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামকরণ করা হয়।
কৃষিনির্ভর জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আম প্রধান ফসল। আমের রাজধানী নামে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের সর্বত্রই এখন আমের মুকুলের ম ম গন্ধ। তবে এ বছর শীত বেশি দিন থাকায় এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২ দফা বৃষ্টির কারণে মুকুল আসতে একটু দেরি হয়েছে।
আম চাষি ও বাগান মালিকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত মুকুলের অবস্থা বেশ ভালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের উৎপাদন ভালো হবে।
আম চাষিরা জানান, এই মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানগুলোতে দেরিতে মুকুল আসলেও বেশিরভাগ গাছ মুকুলে ছেয়ে গেছে। তবে অপেক্ষাকৃত ছোট গাছের চেয়ে বড় গাছে মুকুল কম হয়েছে। চাষিরা মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সদর উপজেলার টিকরা গ্রামের সাইদুর রহমানে জানান, শীত বেশি দিন থাকার কারণে মুকুল দেরিতে এসেছে। তাদের পৈত্রিক ১২ বিঘার বাগানে এখন পর্যন্ত মুকুল হয়েছে ৭০ ভাগের বেশি। আশা করছি ভালো ফলন পাবো।
গোয়ালটুলি গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, এবার শীত বেশি সময় থেকেছে। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে বৃষ্টির কারণে মুকুল আসে দেরিতে। শীতের শেষে যখন তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে তখন থেকেই গাছে মুকুল দেখা দেয়।
তিনি জানান, এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহেও আশানুরূপ মুকুল আসেনি। বেশিরভাগ গাছেই মুকুলের দেখা মিলেছে অনেক দেরিতে। এখনো কোনো কোনো গাছে মুকুল বের হচ্ছে। চাষিরা মুকুল রক্ষায় প্রয়োজনীয় কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ও সেচ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে আমের উৎপাদনও ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
একই উপজেলা চটিগ্রামের আমচাষী আফজাল হোসেন জানান, তার ৫ বিঘা জমিতে ৪৫০ আম্রপালি ও ১০০ বারি-৪ গাছ আছে। এগুলো সবই খাটো জাত। বাগানের সব গাছেই প্রচুর মুকুল এসেছে। এখন যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে সব মুকুল ফুটেই গুটি বের হবে। মুকুল দেখে মনে হচ্ছে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে। এমন কোনো গাছ নেই যেখানে মুকুল নেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৫৫ লাখ আম গাছ আছে। গত বছর ৩৪ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল। উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ২.৬ হাজার টন। এবার ৭০ শতাংশ আম গাছে মুকুল এসেছে।
তিনি জানান, এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে শীতের মধ্যে ২ দফা বৃষ্টি হয়েছে। গড় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৪৫ মি.মি. ও ৫ মি.মি। এই ২ দফা বৃষ্টির কারণে মুকুল আসতে দেরি হয়েছে। গতবছরও জেলায় প্রায় একই পরিমান আম গাছে মুকুলে এসেছিল এবং আমের ফলন বেশ ভালো ছিল। ফলে তুলনামুল কম দামে বাজারে আম পাওয়া গেছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলায় এই মৌসুমে ৩ লাখ ২৫ হাজার টন আম উৎপাদন হবে বলে কৃষি বিভাগ আশাবাদ জানিয়েছে।