টিকিট কাটা নিয়ে তর্কের জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা নগর পরিবহনের একটি বাসের চালকের বিরুদ্ধে৷ ওই ছাত্রের অভিযোগ, চালকের পক্ষ হয়ে অজ্ঞাত একজন ব্যক্তি তাকে মারধর করেছেন৷ খবর পেয়ে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী নগর পরিবহনের তিনটি বাসে ভাঙচুর চালিয়ে সেগুলো আটক করেন৷
আজ রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে৷ আটক করা তিনটি বাস এখন শাহবাগে জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে রাখা আছে৷ ভুক্তভোগী ছাত্র আজমান সামীর (২০) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র৷ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী৷ মারধর ও লাঞ্ছনার ঘটনায় মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আজমান সামীর বলেন, “আমি অমর একুশে বইমেলায় একটি স্টলে কাজ করছি৷ বইমেলার উদ্দেশে শনির আখড়া থেকে আজ রোববার বেলা পৌনে তিনটার দিকে রওনা দিই৷ নগর পরিবহনের নিয়ম হচ্ছে, টিকিট কেটে গাড়িতে উঠতে হয়৷ কিন্তু তিনটার মধ্যে বইমেলায় আসার তাড়া থাকায় আমি টিকিট না কেটে বাসে উঠে পড়ি৷ আমি ছাড়া আরও কয়েকজন টিকিট ছাড়া উঠেছিলেন৷ এ নিয়ে বাসের চালকের সঙ্গে পরবর্তী পয়েন্টের চেকারের তর্ক হয়৷ টিকাটুলীর ওই পয়েন্টে আসার পর আমি বলি যে তাড়াহুড়ায় টিকিটটি কাটা হয়নি, টিকিট কাটতে চাই৷ তখন বাসের চালক আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন৷ আমি সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদ করি এবং মুঠোফোনে বিষয়টি আমার হলের বন্ধুদের জানাই৷”
আজমান সামীর আরও বলেন, “নগর পরিবহন সাধারণত মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ হয়ে বেরোয়৷ কিন্তু বন্ধুদের খবর দেওয়ার বিষয়টি শুনে মৎস্য ভবনের সামনে চালক বলেন যে বাসটি শাহবাগের দিকে যাবে না৷ বাসটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে বইমেলার ফটকে থামাতে বললেও চালক থামাননি৷ তিনি গাড়ি নিয়ে দ্রুতগতিতে চলে যান এবং উল্টো পথে বাস ঘুরিয়ে শাহবাগের দিকে না গিয়ে অন্য রাস্তা ধরেন৷ আমি এর প্রতিবাদ করলে বাসে উপস্থিত একজন তৃতীয় ব্যক্তি (যাত্রী) চলন্ত বাসের মধ্যেই আমার ওপর আক্রমণ করেন৷ তিনি গলা চেপে ধরে আমাকে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করেন৷ ওই ব্যক্তির সঙ্গে আমার কোনো পূর্বপরিচয় তো নেই-ই, কোনো রকম তর্কও হয়নি৷ তখন অন্য যাত্রীরা ছুটে এসে আমাকে আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন৷ এই আকস্মিক অদ্ভুত আচরণের কারণ জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি আমাকে অকথ্য গালিগালাজ করেন ও হুমকি দিতে থাকেন৷”
বারবার বাস থেকে নামতে চাইলেও বাসের দরজা ‘লক’ করে তাকে চলন্ত বাসে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় বলে জানান আজমান সামীর৷ তিনি বলেন, “অনেক চেষ্টার পর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে আমি বাস থেকে নামতে সক্ষম হই৷ তখন আমি দৌড়ে বাসের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ৯৯৯-এ কল করে আইনি সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করি৷ বাসের চালক তখন আমার ওপর দিয়েই বাস নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ এর মধ্যে ওই তৃতীয় ব্যক্তি বাস থেকে নেমে আমাকে টেনেহিঁচড়ে আবার বাসে তোলার চেষ্টা করেন৷ কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে তুলে নিয়ে হত্যার হুমকি দেন তিনি৷ ওই তৃতীয় ব্যক্তি আমার মুঠোফোন নিয়ে গেছেন৷ বইমেলার দোকানের কিছু টাকা সঙ্গে ছিল, সেখান থেকে তিন হাজার টাকাও তিনি ছিনিয়ে নিয়েছেন৷ রাস্তা তখন ফাঁকাই ছিল৷ একপর্যায়ে চালক বাসটি নিয়ে দ্রুতগতিতে পালিয়ে যান৷”
আজমান সামীর জানান, এই ঘটনায় তিনি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ঘটনাটি শুনেছেন৷ তিনি এখন থানার বাইরে আছেন৷ থানায় গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন৷
সূত্র: প্রথম আলো