নভেম্বর ১০, ২০২১, ১০:০৫ এএম
রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সত্যতা পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এরই প্রেক্ষিতে উপযুক্ত প্রমাণসহ দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানের সাথে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সকল তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে চায় ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে অনেক জায়গায় লেখালেখি হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও যাচাই-বাছাই করতে চায়। যে প্রতিষ্ঠান এই পরীক্ষার দায়িত্বে ছিল তাদের সাথেও বসা হয়েছে। পুরো ব্যাপারটি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
জালিয়াতি চক্র সম্পর্কে ডিবির বক্তব্য দেখুন।
১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয় প্রশ্ন
অবশেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সত্যতা পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ফাঁস চক্রের সদস্যরা প্রথম ব্যক্তির কাছে একটি প্রশ্ন বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকায়। সেই প্রশ্ন হাত বদল করে কোটি কোটি টাকা পকেটে তুলেছে চক্রের সদস্যরা। যারা প্রশ্ন ফাঁস করেছেন এবং যারা প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের ১০ জনকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এদের মধ্যে দুজন এর আগে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা দিয়ে ব্যাংকের চাকরি পান। তখন থেকেই প্রশ্ন ফাঁস চক্রে জড়িত তারা।
জড়িত বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হবে
এ চক্রে জড়িত বলে অভিযুক্ত আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কেও খোঁজখবর নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। বাংলাদেশ ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় পাঁচ ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় শনিবার বেলা তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত। ১ হাজার ৫১১টি পদের বিপরীতে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন চাকরি প্রত্যাশী। একাধিক প্রার্থীর দাবি, পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০০টি প্রশ্নের প্রিন্ট করা উত্তরপত্র ফেসবুকে পাওয়া গেছে।
ফেসবুকে উত্তরপত্র ছড়ানোর ঘটনায় চাকরিপ্রার্থীরা প্রশ্ন তোলেন, পরীক্ষা চারটায় শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১০০টি প্রশ্নের ‘সঠিক উত্তর’ ফেসবুকে পাওয়া সম্ভব নয়। এটা প্রমাণ করে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।
১০ জন আটক
পুলিশ জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগের সূত্র ধরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একটি দল তদন্তে নামে। প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তথ্য সংগ্রহের পর দুদিন টানা অভিযান চালায় দলটি। ঢাকা, সাভার ও উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁওয়ে অভিযানকালে গোয়েন্দা জালে আটক হয় ১০ জন। এদের মধ্যে জামালপুরের স্বপন, জাহিদ, জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ইমদাদুল হক খোকন, পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান মিলন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র (চাকরি প্রার্থী) সাজ্জাদ হোসেন শিহাবের নাম জানা গেছে। এদের ঢাকা মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, এই চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ইমদাদুল হক খোকন প্রশ্ন ফাঁস চক্রে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন। এরপর থেকে ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িয়ে যান তিনি।