পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে পিটার ডি হাসের সৌজন্য সাক্ষাত

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সমর্থনে নতুন ভিসানীতি, জানালেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মে ২৫, ২০২৩, ১০:২৯ পিএম

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সমর্থনে নতুন ভিসানীতি, জানালেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতেই এবং গণৈতন্ত্রের সমর্থনেই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, এটি পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎ ছিল এবং আমাদের নিয়মিত বৈঠকের অংশ। বৈঠকে দুই দেশের চমৎকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যে নতুন ভিসানীতি  ঘোষণা করেছে তা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি এবং গতকাল(বুধবার) আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) বিবৃতিতে যা দেখেছেন, তা বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও প্রধানমন্ত্রীসহ সবার জন্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

এর আগে, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণার কারণ ব্যাখ্যা করে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট’র মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রতীয়মান যে কোন বাংলাদেশী ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রদান সীমিতকরণে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি: “বাংলাদেশের জনগণের কাছে আজ আমাদের বার্তা হলো আমরা আপনাদের সাথে আছি, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। আমরা আপনাদের দেশে গণতন্ত্রের সমর্থনে এই নীতি ঘোষণা করছি।”

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে হলে নতুন এক নীতিমালার শর্ত পূরণ করতে হবে। এর আওতায় বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে তার জন্য দায়ী ব্যক্তি এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

 

বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে ওই ঘোষণা দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আমি আজকে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে।’

যাঁদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ হবে, তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা–কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, এমন কাজের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।

ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ সবার। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সবাইকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।”

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত অঙ্গীকারের প্রতি জোরালো সমর্থনের জন্য সরকার যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেদের নীতি নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু আমাদের দেশে তো আর গুজব রটনাকারীর অভাব নেই। তাই বিভিন্ন রকম বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। যে বক্তব্য তারা (যুক্তরাষ্ট্র) দিয়েছেন, সেটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেটা চাচ্ছেন, সেটিকে আরও জোরালো করেছে।”

এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “আমরা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন চাই, যা হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বদ্ধপরিকর। এ জন্য যত ধরনের প্রক্রিয়া দরকার, তা করা হচ্ছে। যাতে কারচুপির ভোট না হয়, সে জন্য ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়েছে। কেউ কেউ রাতের অন্ধকারে ভোট হওয়ার কথা বলছে, সে কারণে আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করেছি। আমরা একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি।”

এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “এখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি প্রকাশ করেছে, তাতে সেই কথাই বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা বলেছে, ‘আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) যে নীতি প্রকাশ করলাম, এটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আগ্রহ সেটিকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে’, এটা ভালোর জন্যই হয়েছে।”

Link copied!