'সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়', 'টেকসই উন্নয়ন', 'আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবিক কার্যক্রম' এবং 'মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে গঠনমূলক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা'- এ চার মৌলনীতিকে ভিত্তি করে ইন্দো-প্যাসিফিক রুপরেখা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ।
এ চার মৌলনীতির আলোকে ১৫টি অভিলক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সকলের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান অক্ষুন্ন রাখা, বিরোধ নিষ্পত্তিতে সংলাপ ও বোঝাপড়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করা, নিরস্ত্রীকরণ, শান্তি বিনির্মাণ এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে অর্থবহ ও আন্তর্জাতিক মূল্যবোধসম্পন্ন অবদান রাখা।
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে ১৫ দিনের সফরে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য যাবার প্রাক্কালে আগেরদিন সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এ রূপরেখা ঘোষণা করলো।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ রূপরেখা পড়ে শোনান। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের আশু স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি ‘ভিশন ২০৪১’ এর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এ 'ভিশন ২০৪১' একটি আধুনিক, জ্ঞান-ভিত্তিক, উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করে।
তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিরাজিত সম্পদ সামষ্টিক বৈশ্বিক জিডিপিতে অভিহিত অংশ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অগ্রগণ্য অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সামগ্রিক কার্যক্রম এবং প্রযুক্তি খাতে গতিশীল বিকাশ বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদে টেকসই অর্থনীতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতকল্পে একটি সুদূরপ্রসারি ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশ তাই এই অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সকলের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণা বাস্তবায়নের বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে।
তিনি বলেন, নবঘোষিত রুপরেখায় রয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আন্তঃদেশীয় সংগঠিত অপরাধসমূহ দমনে নীতি কাঠামো প্রণয়ন ও ব্যবহারিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়াসকে সমর্থন করা। যে কোন ভবিষ্যৎ সঙ্কট ও বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও অবাধ বাণিজ্য প্রবাহকে সুসংহত করতে টেকসই আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক ভ্যালু চেইন তৈরির উদ্দেশ্যে দেশীয় কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতসমূহের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা, জল-সংহতি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা।
রুপরেখায় আরও রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, সামুদ্রিক দূষণ এবং পরিবেশের উপর ক্ষতিকারক প্রভাবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও অঙ্গীকারসমূহের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ধারাবাহিকভাবে দৃশ্যমান কার্যক্রম নেওয়া। সকলের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
ভবিষ্যৎ অতিমারী মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণের লক্ষ্যে ভ্যাকসিন, ডায়াগনস্টিক ও চিকিৎসা সুরক্ষা সামগ্রীর মতো ‘বৈশ্বিক সম্পদ’-এ সবার অভিগম্যতা নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং পরস্পরের পরিপূরক স্বার্থসমূহ সমুন্নত রাখতে উপ-আঞ্চলিক অংশীদার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করা।