বেটা
মার্চ ২৮, ২০২৩, ০৪:২৪ পিএম
র্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের আঘাত শুধু মাথায় নয়, হাতেও পাওয়া গেছে জখম। সুরতহাল রিপোর্টে বিষয়টি উঠে এসেছে। এ রিপোর্টে শুধু হাতের বাইরের আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের সময় চিকিৎসকেরা দেখেছেন, হাতের ভেতরে মাংসে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল।
ভূমি কর্মচারী জেসমিনের মৃত্যুর পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গিয়ে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার জেসমিন আক্তার। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, মাথা ছাড়াও জেসমিনের ডান হাতের কনুইয়ের কাছে তিনি আঘাত দেখেছেন। সুরতহাল রিপোর্টে এসব আঘাতের কথা উল্লেখও করা হয়েছে।
রামেকের মর্গে তিনজন চিকিৎসকের একটি বোর্ড ময়নাতদন্ত করেন। এই দলের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, ডান হাতে বাহুর নিচে ও কনুইয়ের কাছে একটা কালশিরা জখম ছিল। ময়নাতদন্তের সময় তারা ওই স্থানের ‘মাংসে জমাটবাঁধা রক্ত’ দেখেছেন। তবে এই আঘাত জেসমিন কীভাবে পেয়েছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জেসমিনের স্বজনেরা গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, আটকের পর জেসমিনকে নির্যাতন করা হয়েছিল। এর ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে র্যাবের পক্ষ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারী ছিলেন। গত ২২ মার্চ সকালে অফিসে যাওয়ার পথে নওগাঁ থেকেই তাকে আটক করে র্যাব-৫ এর রাজশাহীর একটি দল। র্যাব দাবি করছে, আটকের পরই অসুস্থ হয়ে পড়লে জেসমিনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু জেসমিনকে সকালে আটক করা হলেও নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেসমিন কোথায় ছিলেন তা জানা যায়নি।
জেসমিনের মামা নজমুল হক মন্টু আজ মঙ্গলবার বলেছেন, আমার ভাগনিকে আটক করা হয়েছিল নওগাঁর নওজোয়ান মোড় থেকে। র্যাব বলছে, আটকের পরই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সকাল ১০টার দিকে আটক করে হাসপাতালে নেওয়া হলো দুপুরে। অথচ নওজোয়ান মোড় থেকে হাসপাতালের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার। রাস্তায় যানজট নেই। গাড়িতে যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট। বাকি সময় কোথায় ছিল? সময় মিলছে না বলেই আমার সন্দেহ তাকে নির্যাতন করা হয়েছে।
নওগাঁ হাসপাতাল থেকে জেসমিনকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল একইদিন রাত সাড়ে ৯টায়। পরে ২৪ মার্চ সকালে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) জেসমিন মারা যান। ২৫ মার্চ সকালে রামেকের মর্গে জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে মরদেহ দাফন করা হয়।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহম্মদ বলেছিলেন, জেসমিনের মাথার ডান পাশে তারা একটি আঘাতের চিহ্ন দেখেছিলেন। সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মাথায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। এর বাইরে তারা অন্য কোথাও আঘাত দেখেননি।
র্যাবের বরাত দিয়ে তিনি বলেছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় পড়ে গিয়ে জেসমিন মাথায় আঘাত পান।
সুরতহাল রিপোর্টে হাতে আঘাতের বিষয়টি উঠে আসার ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, সুরতহাল রিপোর্ট করার সময় তো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখা হয়। আমরা ওভাবে দেখি না। তাই এই আঘাত আমাদের নজরে আসেনি। আমরা শুধু মাথার আঘাত দেখেছি।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ কেন হয়, জানতে চাইলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও রামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, বাইরে থেকে আঘাত পেয়েও হতে পারে, আবার অসুস্থতার জন্যও হতে পারে। এই রক্তক্ষরণ কেন তা জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। হাতের আঘাতটা কীভাবে হয়েছিল সেটাও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
কফিল উদ্দিন আরও বলেন, মৃত্যু সনদে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং হার্টফেল মৃত্যুর কারণ বলে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক। এ জন্য জেসমিনের হার্টও সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। সবগুলো রিপোর্ট পেলে আমরা তিনজন চিকিৎসক বসে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাব। তখন মতামতসহ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় আরও চার-পাঁচ দিন সময় লাগতে পারে।
-20241121105543.jpg)
-20241027115010.png)
-20241102183141.jpg)
