সমালোচনা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরলেন নুর, যোগ দিলেন দলীয় কর্মসূচীতেও

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ১১, ২০২৩, ০৮:৪২ পিএম

সমালোচনা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরলেন নুর, যোগ দিলেন দলীয় কর্মসূচীতেও

গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর দেশে ফিরেছেন। বুধবার বেলা সকাল সাড়ে ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।

গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফ তাঁর দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, ইমিগ্রেশন শেষ করে দুপুর সাড়ে ১২টার পর এয়ারপোর্ট থেকে বের তিনি সরাসরি প্রেসক্লাবে গণতন্ত্র মঞ্চের গণ-অবস্থানে অংশ নেন।

গত ১৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে নুর ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরবের  উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।

ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরব গেলেও এর আগে তিনি কাতার ও দুবাই সফর করেন।দুবাইয়ে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র লিকুদ পার্টির অন্যতম সদস্য কথিত মেন্দি এন সাফাদির সাথে দেখা করেন। অনেকে বলছেন, সাফাদি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য। এ নিয়ে বিতর্ক ছড়ায়। তবে নুর এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, যে কেউ যে কারো সাথে বৈঠক করতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই।

নুরের ওই বক্তব্যের আগে কথিত মেন্দি সাফাদির সাথে সেই বৈঠকের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম দিকে নুরের পক্ষের লোকজন সেই ছবি কারসাজি করা বলে দাবি করে। কিন্তু নুর পরে ভিডিও লাইভে এসে সেই ছবি ও সাক্ষাতের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

কিন্তু নুর-এর এই বিদেশ সফর ও বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এমন একটি দেশের গোয়েন্দা সদস্যের সাথে দেখা করার বিষয় নিয়ে অনেকে তীব্র সমালোচনা করেন।

কূটনৈতিক অবস্থান হিসেবে বাংলাদেশ সব সময় ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের পক্ষে ভোটও দিয়েছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দার সাথে ছবি তুলে নুরুল হক নুর কি দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন কিনা—এমন প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।

সাবেক সচিব ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার একেএম আতিকুর রহমান যেমনটা বললেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করতেই পারে। তবে তাদের মধ্যে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেটাই আসল বিষয়। যদি আলোচনায় দেশের বিরুদ্ধে কিছু বলে থাকে বা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে পরিণত হওয়ার মতো হয় তাহলে কাজটা নুর ঠিক করেননি। এ বিষয়ে তাঁকে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা জবাবদিহি করতেই পারে।’

আতিকুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ইসরায়েল স্বীকৃতি দিলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ফিলিস্তিনের আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন জানানোর কারণে ওই স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগণেরও ফিলিস্তিনের প্রতি সমবেদনা রয়েছে। এ অবস্থায় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সাথে নুরের ‘বৈঠক’ বা দেখা করা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেকটা ক্ষুন্ন হয়েছে। এই কাজটা নুর ঠিক করেননি।

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীও একই মত প্রকাশ করে বলেন,যদি নুরুল হক নুর ওই ইসরায়েলি গোয়েন্দা সদস্যের সাথে বৈঠক বা সাক্ষাৎ করে থাকেন তবে সেটি খুবই ‘অন্যায়’ হয়েছে। অনেকটা ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’র শামিল এটি। হ্যাঁ, ইসরায়েলের লোকজনের সাথে পারসোনালি কথা বলতে পারেন। ছবিও তুলতে পারেন। তবে সরকারি কর্মকর্তা বিশেষ করে ওই দেশের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যের সাথে কথা বলা বা তাঁর সাথে বৈঠক কোনোভাবেই করতে পারেন না।

আবুল হাসান চৌধুরী এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, বাংলাদেশ এখনও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। ওই দেশটির সাথে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

ইসরায়েলি ওই গোয়েন্দা সদস্যের সাথে কী কথা হয়েছে তা জানার জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

Link copied!