সিনহা হত্যা মামলার ৩০০ পৃষ্ঠার রায় পড়ছেন বিচারক

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৩১, ২০২২, ০৩:৪০ পিএম

সিনহা হত্যা মামলার ৩০০ পৃষ্ঠার রায় পড়ছেন বিচারক

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার মামলার রায় পড়া শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল সোমবার দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে ৩০০ পৃ্ষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন। এর আগে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার মামলার রায় ঘোষণার আগেই কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ অভিযুক্ত ১৫ আসামিকে। সোমবার দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তাদের হাজির করা হয়।

কড়া নিরাপত্তায় আদালত প্রাঙ্গণ 

মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকেই কক্সবাজার জেলা ও দায়রা আদালত প্রাঙ্গণে কড়া উপস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আদালতের প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে ব্যারিকেড। এ মামলার প্রধান দুই আসামি হলেন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী।

কাঠগড়ায় প্রদীপের পরনে দেখা যায় ধূসর জ্যাকেট। তার পাশেই দাঁড়িয়েছেন লিয়াকত। পুলিশের আরও সাত সদস্য, এপিবিএন এর তিন সদস্য এবং টেকনাফের স্থানীয় তিন বাসিন্দা এ মামলার আসামি। সিনহার বোন, মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসও তার স্বামীকে নিয়ে বেলা ২টায় উপস্থিত হন আদালতে। সকালে এ মামলার রায় ঘোষণার কথা থাকলেও পরে তা পিছিয়ে দুপুরে নেওয়া হয়। রায়ের দিন থাকায় সকাল থেকেই বাড়ানো হয় আদালতের নিরাপত্তা। সকাল ৯টার আগেই আসামিদের কারও কারও আত্মীয়দের দেখা যায় আদালত প্রাঙ্গণে।

বিচারপ্রার্থী ছাড়া আদালতে যাচ্ছে না কেউ 

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সকালেই আদালতে প্রবেশের দুটি ফটকে অবস্থান নিয়ে সাত স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তুলেছেন। পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশের সঙ্গে অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। অপ্রয়োজনীয় যানবাহন নিয়ে কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারে সেটি দেখা হচ্ছে। বিচারপ্রার্থী ছাড়া কাউকে আজ আদালতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’

২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি কাজে বাধা এবং মাদক আইনে তিনটি মামলা করে পুলিশ। আসামি করা হয় সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম সিফাত এবং শিপ্রা দেবনাথকে। এতে সমালোচনার ঝড় উঠে। পরে ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন। আসামি করেন ওসি প্রদীপসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে। আদালতের নির্দেশে তদন্তভার পায় র‌্যাব। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দিয়ে তদন্ত দল বলে, সিনহা হত্যাকাণ্ড একটি পরিকল্পিত ঘটনা।

সিনহা হত্যা মামলার আসামি যারা

টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মো. লিটন মিয়া, এপিবিএন এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, টেকনাফ থানার কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং এএসআই সাগর দেব, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী স্থানীয় তিন ব্যক্তি নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ। আসামিরা সবাই রয়েছেন কারাগারে।

৩১ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে এবং পুলিশের দায়েরকৃত তিনটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সাইদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথকে অব্যাহতি দেন। মামলায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ১২ অভিযুক্ত। ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের বিক্ষোভ

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলার অন্যতম আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপের ফাঁসিসহ সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়েছেন নির্যাতিত শত শত পরিবারের সদস্যরা। এ সময় তারা ‘খুনি প্রদীপের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’, ‘মেজর সিনহার খুনি প্রদীপের ফাঁসি চাই’, ‘২০০ মানুষ হত্যাকারীর প্রদীপের ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে টেকনাফের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। সেখানে ওসি প্রদীপের হাতে নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা খানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিন সোমবার সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা আদালতের প্রবেশপথের পাশে দুটি ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ান ৩০ থেকে ৪০ জন; যারা কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ও হয়রানির শিকার পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

Link copied!