দেশের দুই শেয়ারবাজারে টানা সাত কার্যদিবস পতনের বিষয় নিয়ে শীর্ষ ব্রোকারেজ ও ডিলারদের সাথে বৈঠক করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বৈঠকে পতনের তিনটি ইস্যু প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা হয়েছে পাশাপাশি তারল্য বৃদ্ধিতে চারটি উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সাথে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির নিজস্ব ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে শীর্ষ ব্রোকারেজ ও ডিলারদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোঃ সাইফুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠানটির মূখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন।
পতনের তিনটি কারণের মধ্যে বিএসইসির কাছে উল্লেখ্য হলো, দীর্ঘ মন্দার পর বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যার কারণে দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা বিনিয়োগকারীরা লোকসান কাটিয়ে মুনাফা তুলছে। এতে করে বাজারে সেল প্রেসার কিছুটা বেড়েছে। যার কারণে বাজারে পতনমুখী রয়েছে।
এছাড়া বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম পদত্যাগ ও সরকার থেকে দেয়া এক হাজার কোটি টাকার তহবিল ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে বাজারে গুজব ছড়ানো হয়েছে। যার কারণে বাজারে কিছুটা আতঙ্গ ছড়িয়েছে। এ কারণেও সুচকের পতন হতে পারে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বৈঠক শেষে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একটি মহল শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করার জন্য গুজব ছড়াচ্ছে। সেই মহলটির বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী শেয়ারবাজারকে নিয়ে কারসাজি করতে চায়, আমরা সেই ব্যাক্তিকে আইডেনটিফাই করতে পারি। আমরা এখন অনেক শক্তিশালী। বিনিয়োগকারীদেরকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শেয়ারবাজারের জন্য আমরা কাজ করছি, বিএসইসির চেয়ারম্যানও কাজ করছেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন এমন গুজবের কেনো ভিত্তি নেই। যে গুজবটি ছড়ানো হয়েছে, সেটি হলো শেয়ারবাজারের জন্য ভালই হবে। কারণ মহলটি ছাড়িয়েছে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করা হবে।
শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আমাদের মতবিরোধ আছে। অবণ্টিত লভ্যাংশ ও আমানতের মধ্যে যে পার্থক্য সেটি নিয়েও আমাদের মত পার্থক্য আছে। আমাদের চেয়ারম্যান যদি ওখানে যান, তাহলে এটা তো আমাদের আর ব্যাখ্যা করে বলতে হবে না। তাহলে তো সেটা শেয়ারবাজারের জন্য আরও ভালো হবে, আরও সৌভাগ্যের বিষয় হবে। এটা তো লকোচুরির কিছু নয়। এটা নিয়ে গুজব ছড়ানোর কিছু নেই।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে ক্ষুদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার যে তহবিল করা হয়েছিল, সেটির মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সেটি সরকারকে আর ফেরত দেয়া লাগবে না। নতুন করে ব্যবহার করা যাবে। বাজারে বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণে তারল্য রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বাজারে তারল্য বাড়ানোর জন্য চার ধরনের আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে মধ্যস্ততাকারী ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বন্ড ইস্যু করলে কমিশন দ্রুত তা অনুমোদন দেবে। অবন্টিত লভ্যাংশের টাকা বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে তারল্য বাড়ানো এবং ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকার শেয়ারবাজারে ব্যবহারে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন বলেন, একটি ব্রোকার হাউজ থেকে ব্যাড প্লে করা হয়েছে। তাদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। মার্কেট প্রথমে ভালো থাকলেও পরে এ জন্য আর টেকেনি। এটার তদন্ত করে কঠিন শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই হাউজের নাম কী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নামটা কী, মিটিংয়ে সেটা বলা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, যারা এই ধরনের কাজ করে, বাজারকে মন্দার দিকে নিয়ে যায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হোক। এ বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি।